বিএনএ, চট্টগ্রাম: মাত্র ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড সময়। এরমধ্যেই তালা ভেঙে মোটরসাইকেল উধাও হয়ে যায়। টার্গেট তাদের মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। এসব স্থানে কেউ মোটরসাইকেল রেখে গেলে সিন্ডিকেটের একজন মালিকের পিছু নেয়। অন্যজন “মাস্টার কী” দিয়ে চুরি করে নিয়ে যান মোটরসাইকেল। এমন চক্রের মূলহোতাসহ নয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাত পর্যন্ত টানা ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার হয়। একইসঙ্গে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২৭ মার্চ) কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
এই চোর চক্রের মূলহোতা হলেন মিল্টন সরকার প্রকাশ ওরফে মিল্টন কুমার সাহা প্রকাশ ওরফে মো. সোহেল (৪৪)। তিনি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উত্তরপাড়া দানিস মঞ্জিল প্রকাশ দায়েনসের বাড়ীর মৃত হারাধন সরকারের ছেলে এবং নগরীর পতেঙ্গার ফুলছড়ি পাড়া হুমায়ুনের বাড়িতে ভাড়া থাকে।
মোটরসাইকেলের মিস্ত্রি মেহেদী হাসান (১৯) কুমিল্লা নাঙ্গলকোর্ট উপজেলার মো. জালালের ছেলে। সে মিল্টনের অন্যতম সহযোগী। নগরীর কদমতলীর বুলুর গ্যারেজে কাজ করে এবং মতিয়ার পুল আজিজের ভাড়া ঘরে থাকে সে।
এছাড়া চক্রের বাকি সদস্যরা হলো- মাহমুদুল হাসান (২৪), আনোয়ারুল ইসলাম (৩৭), রফিকুল ইসলাম রিপন (৩৮), মো. ওবায়দুল কাদের (৪২), মো. শাখাওয়াত হোসেন প্রকাশ ওরফে রুবেল হোসেন (২৫), শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ (২৭) ও মো. রিয়াজ (৩২)।
ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, গত ২৫ মার্চ রাতে কদমতলী আটমার্সিং মোড়ে চেকপোস্টে নম্বরবিহীন একটি মোটরসাইকেল থামানো হয়। মোটরসাইকেলের আরোহী মিল্টন ও মেহেদী কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। আমরা তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে আমরা একে একে আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করি এবং মোটরসাইকেলগুলো উদ্ধার করি। একই চক্রে আরও কয়েকজন আছে। এত বড় চক্র সাম্প্রতিক সময়ে সিএমপিতে গ্রেপ্তার হয়নি।
পুলিশ জানায়, অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি Hunk মোটরসাইকেল। একটি নাম্বার বিহীন ও অন্যটি কক্সবাজার-ল-১১-২৩৪১ রেজিস্ট্রেশনের। একটি Pulsar মোটরসাইকেল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর চট্টমেট্রো-ল ১৩-২২৭৫। Glamour মোটরসাইকেল ছয়টি। রেজিস্ট্রেশন নম্বর যথাক্রমে- চট্টমেট্রো-হ-১৪-৬৩৩৮, চট্টমেট্রো-হ-১০-৪৫৪৭, চট্টমেট্রো-হ-১৩-৫৪৩১, চট্টমেট্রো-হ-১৫-১৯৪৮, চট্টমেট্রো-হ-১৩-১১৭১। ছয়টি Discover মোটরসাইকেল, যার সবকটি নম্বর বিহীন। এছাড়া ওয়াল্টন মোটরসাইকেল একটি; Hero Honda একটি ও Yamaha একটি, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভোলা-হ-১১-০০২২। এছাড়া উদ্ধার করা হয় ১৮টি মোটরসাইকেলের ডিজিটাল নম্বর প্লেট। আটটি ইঞ্জিন লক (গেডিলক), Glamour গাড়ির সিটলক ১৯টি, অন্যান্য কোম্পানির সিটলক সাতটি, অয়েল ট্যাংক লক চরটি, একটি হাইড্রোলিক লক ও ৪৫টি ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের তালার চাবি।
কোতোয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা জানান, মিল্টন, রফিক ও রিয়াজ মূলত মোটরসাইকেল চোর। মেহেদী ও ওবায়দুল মোটরসাইকেলের কারিগর। আনোয়ারসহ অন্যরা চোরাই মোটরসাইকেল ক্রেতা-বিক্রেতা। বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে মোটরসাইকেল চুরি করে আনে মিল্টন, রফিক ও রিয়াজ। সীতাকুণ্ডের আনোয়ারের কাছে সেগুলো আট থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। মেহেদী ও ওবায়দুল নম্বরপ্লেট খুলে সেগুলো বিক্রির উপযোগী করে।
বিএনএনিউজ/মনির