বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা সদরে মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৪ নিহত হওয়ার পর থেকে পুরো উপজেলা সদরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।উপজেলা সদরে বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এলাকাবাসীর মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন গলির মুখে লোকজন জড়ো হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সামনে ছাত্ররা অবস্থান নেয়ায় শুক্রবার(২৬ মার্চ) বিকেল থেকে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।দুই দিন ধরে এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের প্রতিবাদে শুক্রবার হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মাদ্রসা ছাত্ররা। এক পর্যায়ে মিছিল থেকে থানায় হামলা চালানো হয়। আত্মরক্ষায় পুলিশ গুলি চালালে ১৫ থেকে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন অনেকে। তাদেরকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ৪ জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। নিহতদের মধ্যে ৩ জন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার ছাত্র রয়েছেন। অন্যজন পথচারী বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর উপজেলা ভূমি অফিসে হামলা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে মাদ্রাসার ছাত্ররা। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সরকারী স্থাপনায় হামলা চালায় তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, মিছিলকারীরা হাটহাজারী থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেছে। সে সময় কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হন।এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাসার ছাত্ররা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।
হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, হেফাজত অনুসারীরা মিছিল করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা হাটহাজারী থানায় প্রবেশ করে ভাংচুর চালায়। রাস্তায় থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষোপ করে তারা।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা পুলিশের ওপর হামলা ও থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে বলে জানান তিনি।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, বিক্ষোভকারীরা সরকারী অফিসগুলোতে তাণ্ডব চালিয়েছে। ভূমি অফিসে আগুন দিয়েছে। থানা এবং ডাক বাংলো ভাংচুর করেছে।
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামবাদী জানান, ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে হামলার পর একটি মিছিল বের করে মাদ্রাসার ছাত্ররা। মিছিলে পুলিশ বাধা দেয় এবং মাদ্রাসা ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এরপরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তবে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হেফাজত অনুসারী মুসল্লিরা মিছিল নিয়ে হাটহাজারী থানার দিকে যেতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হেফাজত অনুসারীরা। পুলিশ প্রথমে টিয়ারশেল নিক্ষেপ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চা। এতেও থামানো না গেলে এক পর্যায়ে রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ।
এদিকে, দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার ছাত্ররা অভিযোগ করেছেন, শুক্রবার মধ্যরাতে অজ্ঞাত পরিচয় কিছু লোক মাদ্রাসার সামনে এসে গুলি চালিয়েছে। এতে মাদ্রসার ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে শনিবার ভোর থেকে মাদ্রাসার সামনে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাটহাজারীতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। পাশাপাশি র্যাবসহ সাদা পোশাকে অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় কিংবা জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে-এমন কর্মকাণ্ড কাউকে করতে দেয়া হবেনা।জনগণের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি।
বিএনএনিউজ/আরকেসি