বিএনএ, ঢাকা : পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নান এমপি বলেছেন, সাংবাদিকসহ দেশের সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসার কাজ চলছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পেশার মানুষও পেনশনের আওতাভুক্ত হবে। সার্বিকভাবে পেনশন ব্যবস্থা করা জটিল কিছু নয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য পেনশন স্কিমের কাজ চলছে।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টাস এসোসিয়েশনের (ক্রাব) প্রয়াত সদস্যদের স্মরণে আলোচনা সভা, মরেণোত্তর সম্মাননা ও সন্তানদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের অগ্রসর মানুষ। তারা আমাদের ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেন। তারা সমাজের আয়না। তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেনশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার জনবান্ধব ও পেশা বান্ধব। তবে কোথাও কখনো কিছূ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও সার্বিকভাবে সরকার পেশার পক্ষেই কাজ করে। সাংবাদিকদের কাজে ঝুঁকি শুধু নয়; ভয়ংকর ঝুঁকি রয়েছে। তাই তাদের জন্য ঝুঁকি তহবিল কিভাবে করা যায় সেটি ভেবে দেখা হবে। এছাড়া সাংবাদিকদের যে কল্যাণ তহবিল যেটা আছে সেটি কিভাবে আরও প্রসারিত করা যায়, বরাদ্দ বাড়ানো যায় সেটি দেখা হবে। এবিষয়ে আমি মাননীয় অর্থমমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গেও কথা বলবো।
ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনাযতনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্র্যাবের সভাপতি মিজান মালিক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, কুড়িগ্রাম-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ এমপি ও ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী। বক্তব্য রাখেন, ডিআরইউ এর সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান খান, ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ও আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আজহার মাহমুদ, সিনিয়র সদস্য গাফ্ফার মাহমুদ, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ এবং ক্রাবের প্রয়াত সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, অনেক বিষয় বাইরে থেকে চাকচিক্য দেখি। কিন্তু ভেতরে অবস্থা যে কত করুণ ও দুর্বিসহ সেটা আমরা দেখতে পাইনা। এখানে এসে অনেক কিছুই জানা হলো। আপনারা প্রয়াত সদস্যদের কথা মনে রেখেছেন, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটা অনেক বড় স্বীকৃতি ও অনেক বড় পাওয়া। মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতা পেশা আলোচিত ও সম্মানের পেশা। সাহসের পেশা। কলম সকলের কাছেই আছে, কিন্তু সাহস সবার নাও থাকতে পারে। আমরা গণতান্ত্রিক পর্যায়ে দেশ চালাচ্ছি। বাস্তব জীবন বড় কঠিন। আমরা দাবী করছি কল্যাণমূলক ও ন্যায় নিষ্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করছি। কিন্তু বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে এটি পরিপূর্ণ সমাজ বাস্তবায়ণ সম্ভব। তাই আমি মনে করি সাংবাদিক বিশেষ করে ক্রাইম রিপোর্টার যারা দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লেখেন তাদের ঝুঁকিভাতা থাকা উচিত।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, আমরা বলি একেকটি মৃত্যু পাহাড়ের চেয়ে ভারী। পিতা-মাতার কাঁধে সন্তানের লাশ এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ।এখন কিন্তু মানুষ অনেক কিছুই মনে রাখে না। অনেকে ভাল কথা বলবো, প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু মৃত্যুর পর আর মনে রাখেন না। এই অমোঘ সত্যকে মেনে নিয়েই আমাদের স্মৃতিচারণ করতে হয়। আমরা এমনই একটি জাতি যারা একময় জাতির পিতা,ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সমস্ত অর্জনই ভুলে যেতে বসেছিলাম। সব ধরণের অর্জন মুছে দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল। সাংবাদিকদের মধ্যে যারা দিকপাল যেমন মানিক মিয়া, জহুর হোসেন তাদের কয়জনকে আমরা স্মরণ করি?। আমার গুরু গোলাম সারোয়ার মারা গেছেন ৩ বছর। এখনও তাকে কিছুটা স্মরণ করা হচ্ছে। কিন্তু জানিনা এটা কতদিন চলবে। ক্রাবের এ ধরণের অণুষ্ঠান আশা জাগায়। তিনি আরও বলেন, ক্রাইম রিপোর্টার দেল নিদিষ্ট গতি থেকে বেরিয়ে কর্মের মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসরে সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে এক বোন বলেছেন আমি ভালো আছি। কিন্তু আসলে কি ভালো আছেন? আজ সাংবাদিকরা ভালো নেই। হয়তো ২০০ বা ৩০০ জন ভাল আছেন। কিন্তু অধিকাংশ সাংবাদিকই না খেয়ে হলেও দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকের চাকরি নেই। প্রধানমন্ত্রী করোনার পরিস্থতিত সাংবাদিকদের ৩ কোটি টাকার কল্যান তহবিল গঠন করেছেন। কিন্তু সেটি যথেষ্ট নয়। এর আওতার বাইরেও অনেক সাংবাদিক রয়েছেন। সাংবাদিকদের জন্য পেনশন দেয়া যায় কিনা সেটি ভেবে দেখতে হবে। যারা অসুস্থ্য হন, মারা যান তাদের পরিবারের জন্য কি করা যায় সেটাও ভেবে দেখা উচিত। তাছাড়া রিপোর্টাররা পত্রিকা প্রাণ। তাই শুধুমাত্র রিপোর্টারদের জন্য একটি আলাদা কল্যাণ তহবিল গঠন করা যায় কিনা ভাবতে হবে।
ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিক বলেন, আমাদের জন ঝুঁকি ভাতা চালু ও ক্রাইম রিপোর্টার যারা লেট নাইট যারা করে তাদের জন্য বিশেষ ভাতার চালু করার জোরা দাবি জানাচ্ছি। আমরা আজ যাকে এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে পেয়েছি তিনি একজন সজ্জন, সৎ ও গণমাধ্যম বান্ধব ব্যক্তিত্ব। আমরা তার কাছে ঝুঁকি ভাতা ও আমাদের জন্য বিশেষ একটি কল্যাণ তহবিলের বিষয়ে সহযোগিতা চাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে ডিআরইউর সহসভাপতি ওসমান গনি বাবুল, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, ক্র্যাবের সহসভাপতি নিত্য গোপাল তুতু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম, আসাদুজ্জামান বিকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান উজ জামান, অর্থ সম্পাদক এমদাদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার আরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনএনিউজ/এসকেকে/এইচ.এম।