প্লেনে উঠে ভাবলাম, দোহা সাহেব পুলিশে চাকরি করেন, তাই নিজেকে খুবই বুদ্ধিমান মনে করেন। আমরা রাজনীতি করি, তাই এই সামান্য চালাকিটাও বুঝতে পারি না!
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩২৪
কলকাতা এয়ারপোর্টে নামবার সাথে খবরের কাগজের প্রতিনিধিরা হক সাহেবকে ঘিরে ফেলল এবং প্রশ্ন করতে শুরু করল। তিনি মুখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর মুখ বন্ধ, আর আমাকে দেখিয়ে দিলেন। প্রতিনিধিরা আমার কাছে এলে, আমি বললাম, “এখানে আমাদের কিছুই বলার নাই। যদি কিছু বলতে হয়, ঢাকায় বলা যাবে।” কলকাতা এয়ারপোর্টে আমাদের প্রায় এক ঘণ্টা দেরি করতে হল। আবার দোহা সাহেব এসে বললেন, “টেলিফোন করে খবর পেলাম, সমস্ত ঢাকা এয়ারপোর্ট মিলিটারি ঘিরে রেখেছে। চিন্তা করে দেখেন, কি করবেন?” আমি তাঁকে বললাম, “ঘিরে রেখেছে ভাল, আমাদের তাতে কি, আমরা ঢাকায়ই যাব। বিদেশে এক মুহূর্তও থাকব না।” প্লেনে উঠে ভাবলাম, দোহা সাহেব পুলিশে চাকরি করেন, তাই নিজেকে খুবই বুদ্ধিমান মনে করেন। আমরা রাজনীতি করি, তাই এই সামান্য চালাকিটাও বুঝতে পারি না!
ঢাকায় এসে দেখলাম, বিরাট জনতা আমাদের অভ্যর্থনা করার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা সকলের সাথে দেখা করে যার যার বাড়ির দিকে রওয়ানা করলাম। আমরা হক সাহেবের পিএ সাজেদ আলীকে করাচি রেখে এসেছিলাম। যদি কোনো খবর থাকে তাহলে টেলিফোন করে যেন জানিয়ে দেয়।
বাসায় এসে দেখলাম, রেণু এখনও ভাল করে সংসার পাততে পারে নাই। তাকে বললাম, “আর বোধহয় দরকার হবে না। কারণ মন্ত্রিত্ব ভেঙে দিবে, আর আমাকেও গ্রেফতার করবে। ঢাকায় কোথায় থাকবা, বোধহয় বাড়িই চলে যেতে হবে। আমার কাছে থাকবা বলে এসেছিলা, ঢাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ হবে, তা বোধহয় হল না। নিজের হাতের টাকা পয়সাগুলিও খরচ করে ফেলেছ।” রেণু ভাবতে লাগল, আমি গোসল করে ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম করছিলাম। বেলা তিনটায় টেলিফোন এল, কেন্দ্রীয় সরকার ৯২(ক) ধারা জারি করেছে।২৮ মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করা হয়েছে। মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে পূর্ব বাংলার গভর্নর, আর এন. এম. খানকে চিফ সেক্রেটারি করা হয়েছে।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৭০।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩২৩