32 C
আবহাওয়া
৭:২২ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ১৪, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী গেজেট প্রকাশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী গেজেট প্রকাশ


ঢাকা: ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত গুম-খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রোববার (২৪ নভেম্বর ২০২৪) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই সংশোধিত আইনের অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করে।

নতুন সংশোধনীতে ভুক্তভোগী, আসামি এবং সাক্ষীদের অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষতিপূরণের বিধানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধের বিচারের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এতে কোনো রাজনৈতিক দলের বিচারের বিধান সংযোজন করা হয়নি।

সংশোধনীর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো:
১. আইনের প্রয়োগসীমা বৃদ্ধি:
পূর্বে আইনটি কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত অপরাধের জন্য প্রযোজ্য ছিল। এখন এটি দেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ এবং বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য হবে।

২. ডিসিপ্লিনড ফোর্সের পুনঃসংজ্ঞা:
সেকশন ২-এ “ডিসিপ্লিনড ফোর্স” বলতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার এবং আইন দ্বারা সৃষ্ট অন্যান্য বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

৩. মানবতাবিরোধী অপরাধের নতুন সংজ্ঞা:
সেকশন ৩(২)-এ নতুন করে যোগ করা হয়েছে জনসংখ্যার জোরপূর্বক স্থানান্তর, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক গুম, মানব পাচার, যৌন দাসত্ব, জোরপূর্বক গর্ভধারণ এবং বন্ধ্যাকরণের মতো অপরাধ।

৪. গণহত্যার সংজ্ঞা সংশোধন:
গণহত্যার সংজ্ঞা থেকে “রাজনৈতিক গোষ্ঠী” বাদ দেওয়া হয়েছে।

৫. প্রযুক্তি ব্যবহার ও সময়সীমা বৃদ্ধি:
ট্রাইব্যুনাল ইচ্ছা করলে অডিও-ভিজ্যুয়াল শুনানির ব্যবস্থা করতে পারবে এবং আসামিদের প্রস্তুতির জন্য সময়সীমা তিন সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ছয় সপ্তাহ করা হয়েছে।

৬. ডিজিটাল প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা:
সেকশন ১৯-এ ডিজিটাল প্রমাণ হিসেবে অডিও, ভিডিও, ডিভিডি, সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে।

৭. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক:
সেকশন ১০(বি)-তে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

৮. ভার্চুয়াল সাক্ষ্য গ্রহণ:
বিশেষ পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারবে।

এ বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, “এই সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীদের সুরক্ষার মান উন্নীত করা হয়েছে। নতুন বিধান অনুযায়ী ভুক্তভোগীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও অধিকার রাখবেন।”

তিনি আরও জানান, নতুন আইন অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদেরও বিচারের আওতায় আনা যাবে।

অন্যদিকে প্রসিকিউটর এ বি এম সুলতান মাহমুদ বলেন, “সংশোধনীর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এতে সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে আমরা একধাপ এগিয়ে গেছি।”

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। আন্দোলন দমনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে সরকার এই আইন সংশোধন করে।

সংশোধনীটি ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে এবং এর আওতায় নির্ধারিত অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে। যদি কোনো অপরাধ এই আইনের আওতায় বিচারযোগ্য না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট আদালতে তা পাঠানোর সুযোগও রাখা হয়েছে।

বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ