বিএনএ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল স্থাপনের ফলে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক গুরুত্ব বেড়ে যাবে। চট্টগ্রাম ওয়ানসিটি টু টাউন হিসেবে গড়ে উঠবে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে গড়ে উঠবে পরিকল্পিত শহর।সেই সাথে দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।
শনিবার(২৬নভেম্বর) সকালে দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশের প্রথম টানেল, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ’ এর দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল নির্মাণের সাথে জড়িত সকলকে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ আমাদের পরপর ৩বার ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে। যার কারণে আমরা পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মত এই উন্নয়নগুলো করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর পর ২১ বছর, ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল-এই ২৯ বছর বাংলাদেশ কেন উন্নতি করতে পারে নাই? কারণ, যারা ওই সময় ক্ষমতায় ছিল এদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করত না। যে কারণ তারা এ দেশকে উন্নত করতে চায়নি। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায়নি। ক্ষমতা ছিল তাদের ভোগের বস্তু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক ছয়লেন করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল জানুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে টানেলের ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে চলমান উন্নয়ন কাজের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনভাবেই উন্নয়নের গতি থামাতে পাবে না।’
যে সমস্ত লোক সরকারের উন্নয়নমুলক কাজ চোখে দেখে না, তাদেকে চোখের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের যে এসডিজি পরিকল্পনা সেটা আমরা মাথায় রেখেছি এবং ২০১০ থেকে ২০২০ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আমরা বাস্তবায়ন করেছি। এখন আমাদের পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। সেজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনার পাশাপাশি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন।
চট্টগ্রাম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, হুইপ শামসুল হক প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল: বিস্তারিত তথ্য
উল্লেখ্য ,২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১০,৫৩৭ কোটি টাকা।
টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিমি এবং এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। এই ক্রস প্যাসেজগুলি জরুরী পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলিতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিমি এবং ভিতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার।
মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে একটি ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।
বিএনএ,জিএন