লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
লিবিয়ার ত্রিপলীতে বুধবার(২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং লিবিয়ার শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রী প্রকৌশলী আলী আবেদ রেজা এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এসময় বাংলাদেশ থেকে আগত উচ্চপর্যায়ের ডেলিগেশনের সদস্যবৃন্দ ও লিবিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার এবং লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরের মাধ্যমে লিবিয়ায় বৈধভাবে বাংলাদেশিদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত হবে। এটি লিবিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা করবে এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এছাড়াও সমঝোতা স্মারকটি লিবিয়ায় অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটি বাংলাদেশ ও লিবিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করবে এবং দু’দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধনকে আরো শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এই সমঝোতার আওতায় লিবিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বিশেষ করে বেতন-ভাতা, কর্মকাল, আবাসন, খাদ্য, ছুটি ও সার্ভিস বেনিফিট ইত্যাদি উল্লেখপূর্বক নিয়োগকর্তার সাথে একটি প্রাথমিক চুক্তি বাংলাদেশে স্বাক্ষরিত হবে। যার মাধ্যমে লিবিয়ায় আগত কর্মীরা দেশে থাকতেই তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে। এছাড়াও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোত্তম তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা হবে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের লিবিয়া আসা ও মেয়াদ শেষে দেশে ফেরার খরচ নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পূর্বে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রী বলেন, এতোদিন বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় কর্মী নিয়োগের কোনো সমঝোতা স্মারক কার্যকর না থাকায় বিভিন্ন মহল সুযোগ গ্রহণ করে আসছিল। ফলে বাংলাদেশি কর্মীরা বিভিন্ন প্রতারণার শিকার এবং জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছিল। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে একটি আইনি কাঠামো তৈরি হয়েছে; যার মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একই সাথে লিবিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা সোশ্যাল সিকিউরিটি ও মেডিক্যাল ইন্সুরেন্সের আওতায় আসবে বলে মন্ত্রী জানান। এছাড়াও তিনি জানান, লিবিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশি কর্মীদের নিয়মিত করণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রী কর্তৃক বিভিন্ন বিষয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানান। তিনি লিবিয়ায় আগত কর্মীদের ভিসা সংগ্রহ থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যয় নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি কর্তৃক বহন করার মাধ্যমে অভিবাসন খরচ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার জন্য লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। একইসাথে তিনি কর্মীদের সোশ্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ এবং মেডিক্যাল ইন্সুরেন্সের ব্যয় নিয়োগকর্তা কর্তৃক পরিশোধেরও অনুরোধ করেন। মন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত পূর্ব অভিজ্ঞতার সনদ লিবিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি প্রদানের অনুরোধ জানান।
এছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী লিবিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধতা অর্জনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের জটিলতা নিরসনে শ্রম মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ প্রেক্ষিতে লিবিয়ায় আনডকুমেন্টেড হয়ে আগত বাংলাদেশিসহ অন্যান্য বিদেশি কর্মীদের বৈধকরণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এ মর্মে শ্রম মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন। একই সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের জটিলতা নিরসনে এই কমিটি কাজ করবে বলে তিনি অবহিত করেন।