বিএনএ, চট্টগ্রাম : গবেষণায় মরণোত্তর একুশে পদক প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বুদ্ধিজীবী চট্টলতত্ত্ববিদ গবেষক আবদুল হক চৌধুরীর ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকালে নোয়াজিষপুরস্থ কবরে পুষ্পস্তবক অপর্ণ, কবর জেয়ারত, খতমে কোরআন ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ, নোয়াজিষপুর সরকারি প্রাইমারী স্কুল ও পরিবারের যৌথ উদ্যোগে এসব আয়োজন করা হয়।
আয়োজনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নোয়াজিষপুর সরকারি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা রানী দাশ, সহকারী প্রধান শিক্ষক অজিত কুমার নাথ, সহকারী শিক্ষিকা সৈয়দা রুবিয়া সুলতানা, নাসরিন আক্তার, সাবরিনা আক্তার, আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো: বেলায়েত হোসেন এবং পরিবারের পক্ষে তাঁর সন্তান অধ্যক্ষ (অবঃ) শহীদুল আমিন চৌধুরী ও ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী প্রমুখ।
আবদুল হক চৌধুরী ১৯২২ সালের ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন নোয়াজিশপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ৭২ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালের ২৬ অক্টোবর পরলোক গমন করেন। তাঁর মাতা মোমেনা খাতুন চৌধুরী ও পিতা আলহাজ্ব সরফুদ্দিন ইঞ্জিনিয়ার দানশীল ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত ছিলেন এবং ১৯৩০ সালে স্বঅর্থায়নে নোয়াজিশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
আবদুল হক চৌধুরী ‘চন্দ্রাবতী’ কাব্যের রচয়িতা কবি কোরেশী মাগন এর সপ্তম অধস্থন পুরুষ। বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূলধারার সংগঠক আবদুল হক চৌধুরী। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রত্যক্ষ যোদ্ধা তিনি। ১৯৭১ সালের ১১আগস্ট তিনি এবং তাঁর পুত্র শহীদুল আমিন চৌধুরী পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত ও গ্রেফতার হন। আবদুল হক চৌধুরীর গবেষণা দেশ বিদেশে ছাত্র-শিক্ষক, গবেষক ও পন্ডিত মহলে উচ্চ মর্যাদায় আসীন।
তাঁর গবেষণার পরিসর চট্টগ্রাম-আরকান-সিলেট ও সাহিত্যের ইতিহাস। চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি গ্রন্থটি সংস্কৃতির মহাফেজ খানা (এনসাইক্লোপেডিয়া) হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে ভিনদেশী পন্ডিত মহলে। আবদুল হক চৌধুরীর রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১২টি। তাঁর রচনাবলী প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আবদুল করিমের সম্পাদনায় বাংলা একাডেমি থেকে ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়েছে, তৃতীয় খন্ড প্রকাশের অপেক্ষায়। জীবদ্দশায় বহু পদক সম্মাননা পেয়েছেন আবদুল হক চৌধুরী। গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন তিনি। তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্ব গ্রাম নোয়াজিশপুরে নির্মিত হচ্ছে আবদুল হক চৌধুরী স্মৃতি কেন্দ্র/ সংগ্রহশালা।
বিএনএনিউজ/জেসমিন বাপ্পি/এইচ.এম।