বিএনএ, খাগড়াছড়ি : জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরো উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টিপাত না থাকায় স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। পানি নেমে যাওয়ার ৫ দিনেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি খাগড়াছড়ি জেলার ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা এখন কি করবেন তা নিয়ে দিশেহারা।
জেলায় প্রায় ১ লক্ষাধিক পরিবার কমবেশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেরই কাঁচা ও আধাপাকা ঘর বানের পানিতে ভেসে যায়। অতিস্রোতে রাস্তা ও সেতুর ক্ষতি হয়েছে। কৃষি খাতে ২ হাজার ১২৪ হেক্টর ফসলি জমির আমন, আউশ ও শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম রবিশস্য চাষে প্রণোদনা দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি জেলায় বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ৫০২ মেট্টিক টন খাদ্য শস্য ও নগদ সাড়ে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন । এদিকে চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনীতে নদীর পানি কমায় জেলা সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি, রামগড় ও মহালছড়িতে নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ি ও কৃষি জমি ছাড়া অন্যান্য জায়গা থেকে পানি নেমে গেছে। পানি নামার পর ও জেলার দীঘিনালা ও রামগড় উপজেলার অধিকাংশ কৃষি জমি এখনো পানি নিচে । চলতি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলার দীঘিনালা উপজেলা। মাইনী নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠায় এটি মাইনী ভ্যালি হিসেবে পরিচিত উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নটি ৫দিন ধরে বন্যার পানি নিচে। কিছু কিছু গ্রামে ঘর বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও ফসলি জমি থেকে পানি নামে নাই। ফলে এখানকার কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরুং ইউনিয়নে শত শত একর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, সবচেয়ে নীচু এলাকা হওয়ায় মেরুংয়ে বন্যা স্থায়ী হয়েছে। দীঘিনালার বাবুছড়া, কবাখালি ও বোয়ালখালি ইউনিয়ন থেকে পানি নেমে গেলেও মেরুংয়ের ৩০ গ্রামে এখনো পানি আছে। মেরুং ইউনিয়নের ৭নং ওর্যাডের ইউপি সদস্য সমীরণ চাকমা বলেন , ‘বাঁচা মরং এলাকা থেকে হেডম্যান পাড়া পর্যন্ত পুরোটায় ধানি জমি। এ গ্রামে ১৪০ পরিবার আছে তারা সবাই কৃষক পরিবার। তারা সকলেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। হাজাধনমুনি পাড়ায় ধানি জমি বাকি অর্ধেক সবজি, অনিন্দ্য কার্বারি পাড়া, নেত্রজয় কার্বারি পাড়া পুরোটাই ধানি জমি। কিন্ত বন্যায় সব শেষ। অনিন্দ্য কার্বারি পাড়ায় কয়েকটি পানের বরজ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের জন্য কোন সহযোগিতা এখনো আসেনি।সরকারি প্রণোদনা না পেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।’
দীঘিনালার উপজেলা কৃষি অফিসার মো.শাহাদাৎ হোসেন জানান, বন্যায় আমন ধান চাষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ৭৬৫ হেক্টর জমির আমন চারা নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩২৩ জন কৃষক। এ ছাড়া ৯০ হেক্টর আউশ এবং ১৩৯ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৮০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করেছি। আগামীকাল আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালকের সাথে কথা বলে পরিকল্পনা নির্ধারণ করব। আমনের চারা রোপণের এখন আর সময় নেই। সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আগাম রবিশস্য চাষাবাদ করার জন্য প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান জানিয়েছেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড় ধ্বসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়লে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় সড়কের দুই দিক থেকে মাটি সরানো হয়েছে। বর্তমানে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়ক যোগাযোগ চালু করা হয়েছে। তবে দীঘিনালা ও সাজেক সড়ক এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। বন্যায় সড়ক যোগাযোগ খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো পুরোপুরি নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম/হাসনা