বিএনএ ডেস্ক: রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবদুল কাদেরসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। তাদের অধিকাংশ ছাত্র।
গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। এ সময় ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। রাত ১০টার পর শিক্ষার্থীদের ধাওয়ার মুখে সচিবালয়ের সামনে থেকে পিছু হটেন আনসার সদস্যরা। তারা পোশাক খুলে জিপিও এলাকা দিয়ে পালিয়ে যান। আনসার সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তাদের ফেলে যাওয়া পোশাকে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। রাত সোয়া ১২টার দিকে ২ শতাধিক আনসার সদস্যকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তুলে দেয় সেনাবাহিনী।
এর আগে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল দিনভর সচিবালয় ঘেরাও করে রাখে কয়েক হাজার আনসার সদস্য।
সচিবালয়ে আনসারের একদল সদস্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রাখেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ‘স্বৈরাচারের দালাল’ স্লোগান দিয়ে আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে আনসার সদস্যরা ছাত্রদের ওপর হামলা চালান। তারা ছাত্রদের ওপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।
রাত ১০টায় সচিবালয়ের সামনের সড়ক দখলে নেন ছাত্ররা। এ সময় আনসার সদস্যরা পিছু হটেন। কিছু আনসার সদস্য জিপিও বক্সের দিকে পালিয়ে যান। আর কিছু সদস্য সচিবালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেন। এ সময় তারা সেনাবাহিনীর সহায়তা চান। ভয়ে অনেক আনসার সদস্য তাদের পোশাক খুলে ফেলেন। এ সময় এসব পোশাকে আগুন ধরিয়ে দেন ছাত্ররা। প্রায় ১১ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত সাড়ে ১০টায় সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট খুলে দেওয়া হয়। এরপর বের হতে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পরে রাতে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচিতে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার তিন দফা দাবি জানান। এক. আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচ সরকারকে বহন করতে হবে। দুই. শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং তিন. সরকারের সব পর্যায়ে ক্লিন অভিযান পরিচালনা করে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করতে হবে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোতাসিম বিল্লাহ মাহফুজ ফেসবুক পোস্টে লেখেন– ‘উপদেষ্টা নাহিদ এবং হাসনাত ও সারজিস ভাইকে সচিবালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিপথগামী কিছু আনসার সদস্য ও ছাত্রলীগের প্রেতাত্মারা। আমরা সবাই মিলে সচিবালয়ে মার্চ করে তাদের মুক্ত করে নিয়ে আসব। সবাই যোগ দিন, বিষয়টি সবাইকে অবগত করুন, অতীব জরুরি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার সময় আনসার সদস্যরা ধাওয়া দেন। এ সময় অনেকের হাতে লাঠিসোটা দেখা যায়। পরে শিক্ষার্থীরা আনসারদের প্রেস ক্লাবের দিক থেকে তাড়া দেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে লাঠিপেটা করেন আনসার সদস্যরা। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আনসার সদস্যরা পিছু হটেন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ/হাসনা