28 C
আবহাওয়া
৭:২০ পূর্বাহ্ণ - জুলাই ২৭, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » জরিপের রাজনীতি! কত বড় দল এনসিপি?

জরিপের রাজনীতি! কত বড় দল এনসিপি?


বিএনএ, ঢাকা : মাইলস্টোন ট্রেজেডির পর গত ২২ জুলাই সচিবালয়ে ছাত্রদের হামলা এবং মাইলস্টোন স্কুলে আইন উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ৯ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকেন। এই অবস্থায় ৪টি বড়ো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে ডাক পায় জাতীয় নাগরিক কমিটি- এনসিপি।
পরদিন গত ২৩ জুলাই ১৩টি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।

YouTube player

বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গণ মাধ্যমে বলেন, চারটা দলকে কোন ক্রাইটেরিয়ায় বড় দল হিসেবে সিলেক্ট করল সরকার? জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপির নিবন্ধনই নাই, বড় দল হিসেবে কীভাবে তাদের সরকার ডাকে এমন প্রশ্ন তুলেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং এনসিপির প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ শুধু গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের নয়, দেশের বেশির রাজনৈতিক দল ও রাজনীতি সচেতন মানুষের। বিএনপির চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ফজলুর রহমান আরেক কাঠি সারেস। তিনি এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামেরও সমালোচনা করেন।

এনসিপি কত বড়ো রাজনৈতিক দল তা আলোচনা করার আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে।

পল জোসেফ গোয়েবলস ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত হিটলারের তথ্য মন্ত্রী ছিলেন। হিটলার সব সময় বিশ্বস্ত এই সহযোগীর কথা শুনতেন। কারণও ছিল। গোয়েবলসের আলোচিত উক্তি ছিল, ‘আপনি যদি একটি মিথ্যা বলেন এবং সেটা বারবার সবার সামনে বলতে থাকেন তাহলে লোকজন একসময় সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করবে।

হিটলারের সময় জনপ্রিয় ছিল রেডিও। বিনামূল্যে জার্মান নাগরিকদের একটি করে রেডিও দেওয়ার ব্যবস্থা করেন মন্ত্রী গোয়েবলস।

গোয়েবলস প্রচার করতেন, জার্মানিতে হিটলারের মতো শক্তিশালী একজনকে দরকার। তিনিই পারবেন জার্মান জাতিকে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিতে। জার্মান রেডিওতে শুধুই থাকত হিটলার ও তার বাহিনীর সাফল্যের কথা। বেতারে এ প্রচারণা শুনতে শুনতে মানুষ বিশ্বাসও করত। বাস্তবে যখন রাশিয়ানদের হাতে জার্মান সেনারা নাস্তানাবুদ তখন গোয়েবলসের প্রচারণা ছিল সোভিয়েত রাশিয়া হিটলার বাহিনীর দখলে।
বাংলাদেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি বড়ো রাজনৈতিক দল হিসাবে সরকারের ডাক পাওয়ার পেছনেও রয়েছে ‘গোয়েবলস ম্যাটিকুলাস ডিজাইন’। আর সেই ‘গোয়েবলস ম্যাটিকুলাস ডিজাইন’ হচ্ছে এনজিও’র ‘রাজনৈতিক জরিপ’।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই পর্যন্ত তিনটি এনজিও রাজনৈতিক জরিপ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এসব জরিপে সরকারি দল এনপিপি’র প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থনকে বেশ মোটা তাজা করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রথম জরিপটি করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)। গত বছরের ১২ই ডিসেম্বর পিআইবিতে এক অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিআইজিডির আয়োজনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ : মানুষ কী ভাবছে’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের গবেষণা সহযোগী শেখ আরমান তামিম জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।

গত ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এই জরিপ চালানো হয়। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বিআইজিডির পালস সার্ভের প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। জরিপে গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণিপেশার চার হাজার ১৫৮ মানুষের মতামত নেওয়া হয়।

জরিপ ফলাফলে বলা হয়েছিল দেশে এখন নির্বাচন হলে কোন দলকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ৩৮ শতাংশ মানুষ। বাকিদের ১৬ শতাংশ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ৯ শতাংশ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।

এ ছাড়া ৩ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ইসলামী দল ও ১ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ৪০ শতাংশ মানুষ ছাত্রদের নতুন দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার কথা জানানো হয় বিআইজিডি ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের ওই জরিপে। যদিও ফলাফল প্রকাশকালে ছাত্রদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করেনি।
দ্বিতীয় রাজনৈতিক জরিপটি করেন ইনোভিশন কনসাল্টিং। বাংলাদেশ ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা এই সংস্থাটি চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ শীর্ষক জরিপটি চালায়। ৮ই মার্চ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

সংস্থাটি জানায়, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ৩৪.৩ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবেন তা জানাতে অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ কাকে ভোট দেবেন সেই প্রসঙ্গে মতামত দিয়েছেন ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোটার। মতামত দেননি ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার।

দ্বিতীয় এই জরিপে কাকে ভোট দেবেন এই প্রশ্নে বিএনপির পক্ষে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ ভোট দিবেন। এছাড়া জরিপে আওয়ামী লীগের পক্ষে পড়েছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট, ছাত্র নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির পক্ষে ৫ দশমিক ১ শতাংশ এবং অন্যান্য দলের পক্ষে গেছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট।

তৃতীয় জরিপটি করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং সংক্ষেপে সানেম। ৭ জুলাই প্রকাশিত জরিপে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে বিএনপি ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পাবে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জামায়াত। দলটি পাবে ২১দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট। ধর্মীয় দলগুলো পাবে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট, জাতীয় পার্টি ৩ দশমিক ৭৭ শতংশ এবং অন্যান্য দল পাবে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ ভোট শতাংশ ভোট পাবে।
তবে আগের দুটি জরিপের তুলনায় তৃতীয় জরিপে জামায়াত ইসলামীর ভোট কমে গেছে। দ্বিতীয় জরিপে যেখানে জামায়াত ইসলামী ভোট দেখানো হয় ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ। চার মাসের ব্যবধানে জামায়াতের ভোট ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে গেছে।

অপরদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি জনপ্রিয়তা রাতারাতি আকাশ ছুয়েছে। দ্বিতীয় জরিপে এনসিপি ৫ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পাবে উল্লেখ করা হলেও তৃতীয় অর্থাৎ সর্বশেষ জরিপে এনসিপির ভোট দেখানো হয় ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট।

বিম্ময়কর হচ্ছে, তার চেয়ে কম ভোট পাবে আওয়ামী লীগ! জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যূত এই দলটি ভোট পাবে মাত্র ১৫ দশমিক ০২ শতাংশ ভোট।
জরিপকারি সংস্থাটি জানিয়েছে দেশের ৮টি বিভাগের ওপর চালানো এ জরিপে অংশ নেয় ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার মানুষ।

প্রশ্ন ওঠেছে, দেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। সেখানে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং সানেম কেন ১৫ বছর বয়সীদের জরিপের অর্ন্তভূক্ত করেছে? তাহলে কী ১৫ বছর বয়সীরা যখন ১৮ বছর বয়স হবে তখনি কী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে?
প্রসঙ্গত, শুভঙ্করের ফাঁকি’ কথাটি তো আমরা হরহামেশাই শুনে থাকি ৷ প্রাচীন বাংলায় ভৃগুরাম দাস নামে এক গণিতবিদ ছিলেন। তিনি ‘শুভঙ্করী’ নামক পাটিগণিতের রচয়িতা। পরবর্তীতে ভৃগুরাম পরিচিতি পায় ‘শুভঙ্কর’ নামে। এই গনিতবিদ এমন কিছু নিয়ম বের করেছিলেন যেগুলোতে গোঁজামিল দিয়ে ভরা। হিসেব নিকেশের মারপ্যাঁচে আসল বিষয় আড়ালে রেখে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ফায়দা হাসিল করার কৌশলকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ বলা হয়ে থাকে ৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রচারই প্রসার এই মন্ত্রে জুলাই ২৪ পরবর্তীতে তিনটি এনজিও’র মাধ্যমে রাজনৈতিক নির্বাচনী জরিপ পরিচালানা এবং পরবর্তীতে তার ফলাফল ফলাও করে প্রচার করে মুলত: নিবন্ধন অপেক্ষামান সরকারি দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপিকে বড়ো রাজনৈতিক দলের কতারে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আর হিটলারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবলস এবং প্রাচীন গনিতবিদ শুভঙ্করের সুত্রের সংমিশ্রণে দেশের ৫০টি নিবন্ধিত দল এবং ১৪৪টি অনিবন্ধিত দলের মধ্যে তৃতীয় স্থানে ওঠে এসেছে এনসিপি।

বিএনএনিউজ/সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ