বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৮
২৩ জুলাই, ১৯৭১
পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকবর্গ তাদের বেতার ও অন্যান্য প্রচারকেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্বের নিকট দিন-রাত প্রচার করে চলেছে যে তাদের দখলীকৃত বাংলাদেশের অঞ্চলসমূহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। বিগত তিন মাসে জঙ্গী শাসকদের অমানুষিক কার্যকলাপ এবং সমগ্র প্রচারণা যে কিভাবে বিশ্বাসঘাতকতা ও মিথ্যাকে অবলম্বন করে অগ্রসর হয়েছে আমরা তা জানি এবং বিশ্বের নিকটও তা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থা সম্পর্কে পাকিস্তান সরকারের চিৎকার এবং ক্রন্দন এই বিশ্বাসঘাতকতা এবং মিথ্যা প্রচারণাই জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
মাসক্যারেনহাস্ নামক ‘সানডে টাইমস’- এর একজন বিখ্যাত সাংবাদিক এই মাসের ১৩ তারিখে করাচী থেকে সপরিবারে লণ্ডনে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে বাঙালী জাতিকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করবার সুপরিকল্পিত কার্যকলাপের একটি লোমহর্ষক এবং প্রামাণ্য বর্ণনা দিয়েছেন। ‘সানডে টাইমস’- এর জেনোসাইড বা একটি জাতিকে নির্মূল করা সম্পর্কে এই প্রামাণ্য তথ্য আজ ইউরোপ, আমেরিকা এবং প্রাচ্যজগতে একটি আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন কিভাবে শক্তসমর্থ যুবকদের ধরে নিয়ে গিয়ে শরীর থেকে রক্ত নিয়ে মৃতদেহগুলোকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে, তিনি দেখেছেন সৈন্যরা কিভাবে যাকে খুশী তাকে ধরছে এবং খেয়ালখুশীমত গুলি করে মারছে। তিনি দেখেছেন এই বর্বর পশুগুলো কিভাবে যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে পাশবিক অত্যাচার করছে। এবং এই জাতীয় আরো বহু চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। আর এই ঘটনাগুলো সবই বেশী দিন আগের নয়। মে মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহের দিকে ঘটেছে। সুতরাং একদিকে মৃত্যুর নিষ্ঠুর লীলা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের বর্বর হানাদার সেনাবাহিনী, অন্যদিকে জঙ্গী সরকার প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে যে অবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে পি-টি-আই্- পরিবেশিত আর একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার উল্লেখ করব। কোন একটি শহরে শতাধিক নিরীহ লোককে বলা হয় যে, রেশনের দোকানে এলে তাদেরকে সাপ্তাহিক রেশন দেয়া হবে। লোকজন সরল বিশ্বাসে রেশনের দোকানে উপস্থিত হয়। তখন সেনাবাহিনী রেশনের দোকান খুলে দিয়ে সেই শতাধিক লোককে বলে যে তারা যতখুশী নিয়ে যেতে পারে এবং তাদের প্রতি কোন অন্যায় করা হবে না। লোকজন যখন রেশন দ্রব্য নিয়ে দোকান থেকে ঘরে ফিরে যাচ্ছিল তখন সৈন্যরা পেছন থেকে গুলি করে এবং শতাধিক লোককে সেখানেই হত্যা করে।
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৮৯) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৭
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৯
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা