28 C
আবহাওয়া
৮:৪৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাংলাদেশে দেড়শ বছরে যত ঘূর্ণিঝড়

বাংলাদেশে দেড়শ বছরে যত ঘূর্ণিঝড়

বাংলাদেশে দেড়শ বছরে যত ঘূর্ণিঝড়

বিএনএ,ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে নানা সময়ে, বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন উপকূলীয় বাসিন্দারা। এখন আরেক ঝড়ের মুখে পড়ছে বাংলাদেশ। যার নাম ইয়াস। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সারাদিন বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছিল। মঙ্গলবার (২৫ মে) থেকে বেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীগুলো। আশঙ্কা করা হচ্ছে, উপকূলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূল সংলগ্ন বিভিন্ন জেলার নানা স্থানে ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাটে পানি উঠছে। বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে লক্ষাধিক মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে ছয় ফুটের বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। এদিকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে একই আলাকায় অবস্থান করছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার (২৫ মে) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার (২৬ মে) দুপুর নাগাদ উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছের সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। প্রস্তুত রয়েছে মেডিকেল টিম। এ ছাড়া শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানিসহ মোমবাতি ও দিয়াশলাই মজুদ রাখা হচ্ছে। করোনার কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পর্যাপ্ত মাস্কসহ অন্যান্য জিনিসপত্র।

ইয়াস এর আসন্ন তান্ডব মনে করিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের পূর্ব থেকেই সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু ঘূর্ণিঝড়ের কথা। গত দেড়শ বছরে বাংলাদেশে নানা সময়েই বিভিন্ন প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে।

১৫৮২ সালের ঘূর্ণিঝড়
আইন-ই-আকবরি, রিয়াস-উস-সালাতিন এবং বিভিন্ন প্রাচীন নথিপত্রের সূত্র উল্লেখ করে সার্ক প্রকাশিত (১৯৯৮) একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ১৫৮২ সালে বাকেরগঞ্জ অঞ্চলে একটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তারিত তথ্য জানা যায় না। এই ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ।

১৭৬৭ সালের ঘূর্ণিঝড়
বরিশাল-বাকেরগঞ্জের উপকূলীয় অঞ্চলে একটি ঘূর্ণিঝড়ে ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল বলে জানা যায়। এ ঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১৩ দশমিক ৩ মিটার বা ৪৩ ফুট।

১৮২২ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৮২২ সালের জুন মাসে ঘূর্ণিঝড়টি সংঘটিত হয়েছিল। এসময় বরিশাল, হাতিয়া ও নোয়াখালীতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যান। আর প্রায় ১ লাখ গবাদিপশু মারা যায় এ ঝড়ে। এসময় চট্টগ্রামের বন্দরে দুইটা জাহাজ নিমজ্জিত হয়।

১৮৩১ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৮৩১ সালে বালেশ্বর-উড়িষ্যা উপকূল ঘেঁষে চলে যাওয়া তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল উপকূলের ২২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ১৫৮৪ সালে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপি ঘূর্ণিঝড়ে পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার উপকূলের দুই লাখ মানুষ প্রাণ হারান।

১৮৭৬ সালের গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন
বর্তমান বরিশাল জেলার একটি উপজেলা হিসেবে পরিচিত হলেও বাকেরগঞ্জ ছিল ব্রিটিশ আমলের একটি জেলা। এই বাকেরগঞ্জ এবং সংলগ্ন অঞ্চলে ১৮৭৬ সালে একটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছিল। বাংলাপিডিয়া এই ঝড়ের তারিখ উল্লেখ করেছে ৩১ অক্টোবর এবং সার্ক (১৯৯৮) প্রকাশিত একটি গবেষণায় এই ঝড়ের তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ১ নভেম্বর। মানুষ ও গবাদিপশুর মৃত্যুর হার, ফসল এবং অন্যান্য সম্পদহানির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করে এই ঝড়কে বলা হয় ‘গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন’। ঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে ১২ মিটারের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় উপকূলীয় এলাকা। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও নোয়াখালীর উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দুই লাখ (২০০ হাজার) মানুষের মৃত্যু হয়। তারও আগে ১৭৬৭ সালে এই বাকেরগঞ্জেই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান ৩০ হাজার মানুষ।

১৮৯৭ সালের চট্টগ্রাম সাইক্লোন
১৮৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়, যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুতুবদিয়া দ্বীপ। ঝড়ে প্রাণ হারান পৌনে দুই লাখ (১৭৫ হাজার) মানুষ।

১৯০৯ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯০৯ সালের ১৬ অক্টোবর খুলনা অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু হয় ৬৯৮ জনের। ১৯৬০ সালে অক্টোবরে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর, পটুয়াখালী ও পূর্ব মেঘনা মোহনায়। ঝড়ের প্রভাবে ৪.৫ থেকে ৬.১ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়।

১৯১৩ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯১৩ সালের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় মৃত্যু হয় ৫০০ জনের। এর চার বছর পর খুলনায় আবারও এক ঘূর্ণিঝড়ে ৪৩২ জন মারা যান।

১৯৪১ সালের ঘূর্ণিঝড়
ভোলা, বরিশাল ও নোয়াখালীর ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল এ ঘূর্ণিঝড়। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ভোলা অঞ্চল। এ ঝড়ে সৃষ্টি হওয়া জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১০-১২ ফুট।

১৯৪৮ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯৪৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে ১২০০ অধিবাসী। ১৯৫৮ সালে বরিশাল ও নোয়াখালীতে ঝড়ে মৃত্যু হয় ৮৭০ জনের।

১৯৬০ এর দশকের ঘূর্ণিঝড়
১৯৬০ সালে অক্টোবরে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার গতির প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর, পটুয়াখালী ও পূর্ব মেঘনা মোহনায়। ঝড়ের প্রভাবে ৪.৫-৬.১ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। এতে মারা পড়েন উপকূলের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা।

চট্টগ্রামে এ ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৩ কিলোমিটার। তবে চট্টগ্রামের বহির্নোঙরে থাকা এস এস বালি নামে সুইডেনের একটি জাহাজ প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ২০৯ কিলোমিটার রেকর্ড করেছিল বলে জানা যায়। ৩১ তারিখ এই ঝড় বরিশাল অতিক্রম করে ১৪৮ কিলোমিটার গতিবেগে। এ ঝড়ের কারণে সৃষ্ট ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ২২ ফুট।

১৯৬১ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯৬১ সালের ৯ মে এ ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল মূলত ঢাকা, কুমিল্লা ও সংলগ্ন এলাকায়। এ ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬১ কিলোমিটার। এটি মেঘনার পশ্চিম মোহনা অতিক্রম করে সকাল নয়টায়। এ ঝড়ে ঢাকা শহরের বেশির ভাগ কাঁচা ঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ মারা যান এই ঝড়ে।

১৯৬২ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯৬২ সালে ২৬ অক্টোবর ফেনীতে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় হাজারখানেক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৬৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চল। এই ঝড়ে প্রাণ হারান ১১ হাজার ৫২০ জন।

১৯৬৩ সালের ঘূর্ণিঝড়
এ ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছিল চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ এবং নোয়াখালী জেলায়। এর উৎপত্তি হয়েছিল উত্তর আন্দামান সাগরে। এটি ২৮ মে রাতে সীতাকুণ্ড দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয় ঘণ্টায় ১৬৭ কিলোমিটার। ঢেউয়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ২০ ফুট। এ ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবে ১১ হাজার ৫২০। বেসরকারি হিসাবে ২২ হাজার

১৯৬৫ সালের ঘূর্ণিঝড়
এ ঝড় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়ে ১১ মে মধ্যরাতে বরিশাল ও নোয়াখালী দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে। এ ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬১ কিলোমিটার। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১২ ফুট। এতে বরিশাল, নোয়াখালী, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড়ে বারিশাল ও বাকেরগঞ্জে প্রাণ হারান ১৯ হাজার ২৭৯ জন। সে বছর ডিসেম্বরে আরেক ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারে মৃত্যু হয় ৮৭৩ জনের।

১৯৭০ সালের ভোলা সাইক্লোন
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় এটি। সাধারণত ১৯৭০ সালের এই ঝড় ‘ভোলা সাইক্লোন’নামে পরিচিত। এটি ছিল সিম্পসন স্কেলে ‘ক্যাটাগরি ৩’মাত্রার ঘূর্ণিঝড়। বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছিল ৮ নভেম্বর। ধীরে ধীরে এটি শক্তিশালী হয় এবং উত্তর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বা ১১৫ মাইল। জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল প্রায় ১০.৬ মিটার। এই গতিতেই এটি উপকূলে আঘাত করে। এই ঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপগুলো প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, চর বোরহানউদ্দিন, চর তজুমদ্দিন, মাইজদী ও হরিণঘাটায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা। তজুমদ্দিনের তখনকার জনসংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজারের মধ্যে ৭৭ হাজার জন প্রাণ হারায় সে ঝড়ে।

ভোলা সাইক্লোনে মৃত মানুষের সংখ্যা নিয়ে পরস্পরবিরোধী মত পাওয়া যায়। সরকারি হিসাবমতে, এই সাইক্লোনে মারা যায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ। আর বেসরকারি মতে এ সংখ্যা আনুমানিক ৫ লাখ। এ ছাড়া ভোলা সাইক্লোনে ৩৮ হাজার সমুদ্রনির্ভর মৎস্যজীবী এবং ৭৭ হাজার অভ্যন্তরীণ মৎস্যজীবী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোট ২০ হাজারের বেশি মাছ ধরার নৌকা ধ্বংস হয়। ১০ লাখের বেশি গবাদিপশুর মৃত্যু, প্রায় ৪ লাখ ঘরবাড়ি এবং ৩ হাজার ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের ঘূর্ণিঝড়:
১৯৭১ সালের নভেম্বরে, ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে, ১৯৭৪ সালের আগস্টে ও নভেম্বরে, ১৯৭৫ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে উপকূলীয় এলাকায়। ১৯৮৩ সালে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, প্রাণ যায় অনেকের।

১৯৮৫ সালের উড়িরচর সাইক্লোন
এই ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং উপকূলবর্তী দ্বীপ সন্দ্বীপ, হাতিয়া এবং উড়িরচরে। বাতাসের গতিবেগ ছিল চট্টগ্রামে ঘণ্টায় ১৫৪ কিলোমিটার, সন্দ্বীপে ১৩৯ কিলোমিটার, কক্সবাজারে ১০৪ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস সংঘটিত হয়। এতে ১১ হাজার ৬৯ জন নিহত হয় এবং ৯৪ হাজার ৩৭৯টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও মোট ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩টি পশুসম্পদ বিনষ্ট হয়। মোট ৭৪ কিলোমিটার সড়ক ও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৯৮৮ সাইক্লোন জিরো ফোর বি (04B):
১৯৮৮ সালের নভেম্বরে এই ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যায় যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এবং বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায়। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার। সেই সাথে সমুদ্রে পানির উচ্চতা বেড়ে যায় ৪ দশমিক ৫ মিটার। এই সাইক্লোনের ফলে দেশের ১১,৭০৮ জনের মৃত্যু হয়।

১৯৯০ এর দশকের ঘূর্ণিঝড়

১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঝড়
১৯৯১ সালের ২২ এপ্রিল মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ২৪ এপ্রিল নিম্নচাপটি ০২বি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এবং উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অগ্রসর হওয়ার সময় এটি আরও শক্তিশালী হয়। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং এর গতিবেগ পৌঁছায় ঘণ্টায় ১৬০ মাইলে। ২৯ এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল বেগে আঘাত করে। স্থলভাগে আক্রমণের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং ৩০ এপ্রিল এটি বিলুপ্ত হয়। এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশের ১৯টি জেলার ১০২টি উপজেলা। তবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, খেপুপাড়া, ভোলা, টেকনাফ। ১৯৯১ সালের এই ঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন মৃত্যুবরণ করে এবং প্রায় সমপরিমাণ মানুষ আহত হয়।

১৯৯১ সালের ৩০ এপ্রিল বয়ে যায় আরেক প্রলয়ঙ্করী ঝড়। ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি ছিল সেই ঝড়ের, পরে তা ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে আছড়ে পড়ে চট্টগ্রাম ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। প্রায় দেড় লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে ওই ঝড়ে।

১৯৯৪-৯৮ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৯৯৪ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত উপকূলবর্তী দ্বীপ এবং কক্সবাজারের চরাঞ্চল ঘণ্টায় ২১০ কিমি বায়ুপ্রবাহসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়। প্রায় ৪০০ মানুষের মৃত্যু এবং ৮ হাজার গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯৯৫ সালের ২১-২৫ নভেম্বর পর্যন্ত উপকূলবর্তী দ্বীপ এবং কক্সবাজারের চরাঞ্চলে ঘণ্টায় ২১০ কিমি বেগে বায়ুপ্রবাহসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। প্রায় ৬৫০ জনের মৃত্যু ও ১৭,০০০ গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে।

১৯৯৭ সালের ১৬-১৯ মে পর্যন্ত উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও ভোলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ঘণ্টায় ২২৫ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ৩.০৫ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের (হারিকেন) শিকার হয়। সরকার ও জনসাধারণের যথাযথ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এ মহাদুর্যোগে মাত্র ১২৬ জন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।

১৯৯৭ সালের ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও ১.৮৩ থেকে ৩.০৫ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী এবং ভোলার চরাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যায়।

১৯৯৮ সালের ১৬-২০ মে পর্যন্ত উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং চট্টগ্রাম কক্সবাজার ও নোয়াখালীর চরাঞ্চল ঘণ্টায় ১৫০ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ১.৮৩ থেকে ২.৪৪ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়।

১৯৯৮ সালের ১৯-২২ নভেম্বর পর্যন্ত উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ এবং খুলনা বরিশাল ও পটুয়াখালীর চরাঞ্চল ঘণ্টায় ৯০ কিমি বায়ুপ্রবাহ ও ১.২২ থেকে ২.৪৪ মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়।

২০০০ সালের পরবর্তী ঝড়

২০০৭ সালে সিডর
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় দেশের দক্ষিণ উপকূল। উত্তর ভারত মহাসাগরে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে সৃষ্ট এ ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ থেকে ৩০৫ কিলোমিটার। এতে তিন হাজরের বেশি মানুষ মারা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩২টি জেলার ২০ লাখ মানুষ। উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৬ লাখ টন ধান নষ্ট হয়ে যায়। সুন্দরবনের প্রাণীদের পাশাপাশি ব্যাপক গবাদিপশু প্রাণ হারায়।

২০০৮ সালে নার্গিস-রেশমি
২০০৮ সালের ২ মে গঠিত হয় ঘূর্ণিঝড় নার্গিস। একই বছরের ২৬ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় রেশমি আহত হনে উপকূলীয় অঞ্চলে। এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

২০০৯ সালে আইলা
২০০৯ সালের ২১ মে ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় আইলা, যার অবস্থান ছিল কলকাতা থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। চার দিনের মাথায় ২৫ মে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে এই ঝড়। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের ১৪৯ জন ও বাংলাদেশের ১৯৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে উপকূলে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুভিটাহারা হয়।

২০১৩ সালে মহাসেন
২০১৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এ প্রাণ হারান ১৭ জন। এরপর ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র আঘাতে মারা যান চট্টগ্রামের ২৬ জন অধিবাসী।

২০১৪ সালে হুদহুদ
২০১৪ সালের ৬ অক্টোবর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় হুদহুদ। ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার গতির বাতাসের সেই ঝড়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশার ব্যাপক ক্ষতি হয়, মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের। তবে বাংলাদেশে ক্ষতির পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে কম।

২০১৫ সালে কোমেন
২০১৫ সালের ৩০ জুলাই ঘূর্ণিঝড় কোমেনে দেশের চার জেলায় অন্তত চারজন মারা যান। ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়া নিয়ে সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে সেই ঝড়।

২০১৬ সালে রোয়ানু
২০১৬ সালের ২১ মে পূর্ণিমায় ভরা জোয়ারে আঘাত হানে রোয়ানু। সেই ঝড়ে লাখখানেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চট্টগ্রামে মৃত্যু হয় ২৪ জনের।

২০১৭ সালে মোরা
৩০ মে ২০১৭ ভোর চারটার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন এলাকা অতিক্রম করতে শুরু করে। এসব এলাকায় তখন বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার। কক্সবাজারে আঘাত হানার সময় বাতাসে এর গতিবেগ শুরুতে কম থাকলেও পরে সেই গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৪ কিলোমিটার।

২০১৯ সালে ফণী
২০১৯ সালের ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে, কেড়ে নেয় অন্তত ৯ জনের প্রাণ। তবে ফসলের ক্ষতি ছিল অনেক বেশি।

২০২০ সালে সুপার সাইক্লোন আম্পান
সুপার সাইক্লোন আম্পান একটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়, যা বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী ভারতের পূর্বাংশে এবং বাংলাদেশে আঘাত হানে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির মধ্যে ছিল। এ শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া এটিই প্রথম সুপার ঘূর্ণিঝড়।

এই ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছেন ১৬জন। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে প্রাথমিকভাবে প্রায় সাড়ে এগারোশ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ, রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্টসহ অবকাঠামোর পাশাপাশি ঘরবাড়ি, কৃষি এবং চিংড়ি ঘেরসহ মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ পশ্চিমের জেলায় পানের বরজ থেকে শুরু করে রাজশাহীতে মৌসুমী ফল আম এবং উত্তরের অন্য জেলাগুলোয় ধান এবং সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ যেভাবে হয়

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত আটটি দেশ। দেশগুলি হল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান। এই প্যানেলকে বলা হয় ইকনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দা প্যাসিফিক (এএসসিএপি)।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের এই রীতি কিন্তু খুব একটা পুরনো নয়। মাত্র ২০০০ সাল থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে মার্কিন আবহাওয়াবিদ ভার্নন ভোরাকের দেখানো পথে ঘূর্ণিঝড়দের নির্দিষ্ট করা হতো। জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব, সম্ভাব্য তীব্রতার তারতম্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট রং দিয়ে চিহ্নিত করা হত উপগ্রহের পাঠানো ছবিতে ঘূর্ণিঝড়কে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামে থাকত নির্দিষ্ট নম্বর এবং যে সাগরের জলভাগে এর জন্ম হচ্ছে, তার নামের অংশ। কিন্তু সে সব নামকরণ সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। ফলে তাণ্ডবলীলার পূর্বাভাস দেওয়া, মানুষ বা জাহাজ বা জলযানগুলোকে সতর্ক করা কঠিন হয়ে পড়তো।

২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোতে ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। এর আগে থেকেই ব্রিটেন বা অস্ট্রেলিয়া এলাকায় ঝড়ের নামকরণ করা হতো। ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় টাইফুন।

সাম্প্রতিক অতীতে ‘ফণী’-র নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। তারও আগে ২০০৯ সালে বিধ্বংসী আয়লার নামকরণ করেছিল মিয়ানমার। ২০১৯-এ ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর নাম দিয়েছিল ভারত। এর পাঁচ বছর আগে ঘূর্ণিঝড় ‘হুদহুদ’-এর নাম দিয়েছিল ওমান।

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’নামটি যেভাবে এলো

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে এগিয়ে আসছে ‘ইয়াস’। এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হলো কিভাবে অথবা এই নামের অর্থই বা কি এ ব্যাপারেও অনেকের মনেই প্রশ্ন থেকে যায়। পৃথিবীতে মোট ১১টি সংস্থা ঝড়ের নাম ঠিক করে। ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নামটি প্রস্তাব করেছে এসবাপের সদস্য ওমান।

ইয়াস একটি ফার্সি শব্দ। এর অর্থ হতাশা ও দুঃখ। এই শব্দটি ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ বিশ্বের ১৩টি দেশ নিয়ে গঠিত এসকাপের কমিটি ওমানের দেওয়া এই নামটি ঠিক করে। ইয়াসের পর আরও যে ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়েছে, সেগুলি হল গুলাব, সাহিন, জাওয়াদ, অশনি, সীতরাং, মানদৌস, মোচা।

বেশিরভাগ নামের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের চরিত্রের কোন মিল নেই। তবু রেকর্ড ও সবার বোঝার স্বার্থে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু হয় বিশ শতকের শুরু থেকে।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ