29 C
আবহাওয়া
২:১৬ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৭, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » ২০ বছর ধরে কেন ঘুমাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ!

২০ বছর ধরে কেন ঘুমাচ্ছেন সৌদি যুবরাজ!


রূপ কথা কিংবা সিনেমাতে দেখা যায়, দুষ্টু রাক্ষস বা রাক্ষসীর কারসাজিতে বছরের পর বছর ঘুমিয়ে থাকেন রাজকুমার বা রাজকুমারী। তেমনই বাস্তবের এক যুবরাজও টানা ২০ বছর ধরে ঘুমিয়ে রয়েছেন গাড়ি দুর্ঘটনার ছদ্মবেশে আসা ‘রাক্ষসের’ কারণে।

টানা দু’দশক ঘুমিয়েই ৩৬ বছর পূর্ণ করলেন সৌদি যুবরাজ আল-ওয়ালিদ বিন খালেদ বিন তালাল, বিশ্ব যাঁকে চেনে ঘুমন্ত রাজপুত্র বা ‘স্লিপিং প্রিন্স’ নামে। ১৬ বছর বয়সে একটি ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার ফলে কোমায় চলে যান আল-ওয়ালিদ।

YouTube player

২০০৫ সালে রিয়াদে একটি সড়ক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন ওয়ালিদ। ওই দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে কোমায় চলে যান যুবরাজ । সেই সময় লন্ডনের একটি সামরিক কলেজে পড়তেন তিনি। তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মস্তিষ্কে চোট লাগার কারণে তিনি কোমায় চলে গিয়েছেন। এ যেন এক রূপকথার গল্প। গল্পও ঠিক নয়। কঠোর বাস্তব এবং বড়ই মর্মান্তিক।

রিয়াদের একটি হাসপাতালে ১১ বছর শুশ্রূষার পর ২০১৬ সালে ওয়ালিদকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তিনি নিজের বাড়িতেই লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ওয়ালিদকে দেখভাল করার জন্য জনা দশেক কর্মচারী রাখা হয়েছে সৌদি রাজপরিবারের তরফে। এর জন্য খরচ হয় কোটি কোটি টাকা।

যুবরাজ ওয়ালিদ, সৌদি রাজ পরিবারের সদস্য খালিদ বিন তালাল আল সৌদের ছেলে এবং সৌদি ধনকুবের ব্যবসায়ী আল ওয়ালিদ বিন তালালের ভাইপো। প্রিন্স আল-ওয়ালিদ সৌদি রাজপরিবারের সদস্য হলেও বর্তমান বাদশাহর সঙ্গে সরাসরি উত্তরাধিকারী নন তিনি।

আল-ওয়ালিদের দাদা, তালাল বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ ছিলেন অধুনা সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল আজিজ আল সৌদের ছেলে। সেই সম্পর্কের সূত্রে আল-ওয়ালিদ সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতার নাতির ছেলে।

দু্র্ঘটনার পর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ভেন্টিলেটর এবং ফিডিং টিউবের ওপরই নির্ভরশীল তিনি। বছরের পর বছর ধরে তাঁর অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ সালে, সীমিত সাড়া দেওয়ার কিছু লক্ষণ দেখা গিয়েছিল রাজপুত্রের মধ্যে। তাঁর মাথা এবং আঙুলগুলি সামান্য নড়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর বিশেষ কোনও আশার সঞ্চার হয়নি রাজপুত্রের সুস্থতা নিয়ে।

গত ১৮ এপ্রিল সৌদি রাজপরিবারের সদস্যরা জন্মদিন উদ্‌যাপন করে সামাজিক মাধ্যমে ওয়ালিদের ছোটবেলার বেশ কিছু ছবি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছিলেন। তাঁরা সামাজিক মাধ্যমে রাজপুত্রের সুস্থতা কামনা করে লিখেছিলেন, এতগুলি বছর ধরে তাঁদের হৃদয় জুড়ে রয়েছেন ওয়ালিদ।

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অসীম কৃপায় তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন, প্রার্থনা করেছেন পরিবারের আত্মীয়রা। হাজার হাজার মানুষ তাঁর আরোগ্য কামনা করেছেন। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

একই ধারণা পোষণ করে চলেছেন যুবরাজের বাবাও। তিনিও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, কোমা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ফিরবেন তাঁর আদরের সন্তান। খালিদ মনে করেন, এক দিন ঠিক ‘অলৌকিক’ কোনও ঘটনা ঘটবে এবং তাঁর ছেলে কোমা থেকে বেরিয়ে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

খালিদ এক বার বলেছিলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা আমার ছেলের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন। আমি বলেছিলাম, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ছেলের কবর দিতাম। কিন্তু আমার ছেলে যতক্ষণ নিশ্বাস নেবে ততক্ষণ আমি চিকিৎসা চালিয়ে যাব।’’ শুধু খালিদ নন, কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি থাকা সৌদি রাজপরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই ওয়ালিদের লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করতে রাজি নন।

বিগত বছরগুলোয় যুবরাজের চিকিৎসায় যুক্ত হয়েছিলেন আমেরিকা ও স্পেনের খ্যাতনামা চিকিৎসকেরা। কিন্তু সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনও তাঁর জ্ঞান ফেরানো যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার এমনও রটে গিয়েছিল যে, ওয়ালিদ আর জীবিত নেই। বেশ কয়েক বছর আগেই নাকি তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাঁর পরিবারের তরফে এই কথা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

চিকিৎসকেরা ওয়ালিদকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার সব আশা ত্যাগ করেছেন। পরিবারের আশা ও লড়াই করে যাওয়ার অদম্য জেদেই ২০ বছর ধরে প্রাণের স্পন্দন রয়েছে রাজপুত্রের দেহে। ওয়ালিদের বাবা ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীদের আশা, পৃথিবীতে এমন সোনার কাঠির সন্ধান তাঁরা পাবেন, যা ছোঁয়ালেই আবার চোখ মেলে তাকাবেন তাঁদের আদরের রাজপুত্র ওয়ালিদ।

বিএনএনিউজ২৪ডটকম 

Loading


শিরোনাম বিএনএ