28 C
আবহাওয়া
৫:১৯ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৪৪ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল : সংসদীয় আসন-৪৪ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের হালচাল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ সংসদীয় আসনটি ভোলাহাট, গোমাস্তাপুর এবং নাচোল উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৪৪ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সৈয়দ মনজুর হোসেন বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৮ শত ৮০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৫ শত ৪৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির সৈয়দ মনজুর হোসেন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৫ শত ৮১ ভোট।। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আফসার আলী । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ৯ শত ৪৫ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সৈয়দ মনজুর হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। বিএনপির সৈয়দ মনজুর হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে।এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সৈয়দ মনজুর হোসেন বিজয়ী 
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ৭ শত ৮৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৪শত ১১ জন। নির্বাচনে বিএনপির সৈয়দ মনজুর হোসেন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৬শত ৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আব্দুল খালেক বিশ্বাস। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৩ শত ৫৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন:বিএনপির সৈয়দ মনজুর হোসেন নির্বাচিত

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯ শত ২৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২০ হাজার ১১ জন। নির্বাচনে বিএনপির সৈয়দ মনজুর হোসেন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৯ শত ৪৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জিয়াউর রহমান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৪ শত ১১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জিয়াউর রহমান বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯০ হাজার ৬ শত ৮৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬ শত ৩৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জিয়াউর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫১ হাজার ৮৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২১ হাজার ৯ শত ৬৯ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩২ হাজার ৫ শত ৩৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৩ হাজার ৫ শত ৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খুরশীদ আলম। আনারস প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ৮ শত ৯৬ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির আমিনুল ইসলাম নির্বাচিত হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫১ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭ শত ২৪ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৩ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের জিয়াউর রহমান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আমিনুল ইসলাম, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইব্রাহীম খলিল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে বিএনপির আমিনুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪ শত ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের জিয়াউর রহমান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯ শত ৫২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

২০২২ সালের ১০ই ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলামসহ বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।

উপ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জিয়াউর রহমান বিজয়ী

২০২৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের জিয়াউর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৪ হাজার ৯ শত ২৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী। আপেল প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৩ শত ৯৯ ভোট।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল, ভোলাহাট ও গোমাস্তাপুর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান। আরও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, উপনির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বাচ্চু, রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, গোমস্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ূন রেজা, নাচোল উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কাদের, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আনোয়রুল ইসলাম আনোয়ার এবং যুবলীগ নেতা রফিকুল আলম সৈকত জোয়ার্দার।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের নেত্রী মাসউদা আফরোজা হক শুচি, গোমাস্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাইরুল ইসলাম।
এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে আবদুর রাজ্জাক, বিএনএফের নবিউল ইসলাম এবং জাকের পার্টির গোলাম মোস্তফা নিজ নিজ দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও একাদশ সংসদে বিএনপি প্রাথীরা টানা বিজয়ী হন। শুধুমাত্র নবম, দশম ও একাদশ সংসদের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্ঠা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৯২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫.৫৩%, বিএনপি ৩৩.৮১%, জামায়াতে ইসলামী ২৪.৯০%, জাতীয় পার্টি ০.৩১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৫.৪৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৫৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৭৯%, বিএনপি ৪৩.০৫%, জামায়াতে ইসলামী ১৮.৪৯%, জাতীয় পাটি ৫.৮০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৮৭% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৪৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৬৪%, ৪ দলীয় জোট ৩৯.৫২%, জাতীয় পার্টি ৪.৫৪%,স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২০.৩০% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৪.৪৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৫.১%, ৪ দলীয় জোট ৪৪.৪১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৫৮% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত। আওয়ামী লীগের অবস্থান তেমন মজবুত নয়। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা তলানীতে। জামায়াতে ইসলামীর প্রচুর ভোট রয়েছে। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। জামায়াতে ইসলামী কোন প্রার্থী না দিলে লাভবান হবে বিএনপি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৪৪ নম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বিএনএ/শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ