বিএনএ, চট্টগ্রাম : স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও চট্টগ্রামের অধিকাংশ বধ্যভূমি অরক্ষিত রয়ে গেছে। এগুলো রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
তারা বলছেন, চট্টগ্রামের বধ্যভূমি রক্ষায় মন্ত্রণালয় থেকে কেবল মিথ্যা আশ্বাসই দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে কোনো কাজ হচ্ছে না। এ কারণে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের শেষ চিহ্নগুলো। বেদখল হয়েছে অনেক বধ্যভূমি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরও বধ্যভূমির জায়গা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে না। বধ্যভূমি রক্ষায় আন্দোলন করতে করতে অনেকে জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছেছেন, জীবিত থাকতে সেই সফলতা দেখে যেতে পারবেন কিনা এ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।
প্রতিবেদন সুত্রে জানা যায়, নগরীর ৬১টি বধ্যভূমির মধ্যে পাহাড়তলীতে ১৫টি, লালখান বাজারে ৬টি, হালিশহরে ৫টি, গোসাইলডাঙ্গায় ৫টি, আন্দরকিল্লায় ৪টি, বাকলিয়ায় ৩টি, রহমতগঞ্জে ২টি, কাট্টলীতে ২টি, পতেঙ্গায় ২টি, বন্দর এলাকায় ২টি, কাটগড়ে ২টি, মুরাদপুরে ২টি, নাসিরাবাদে ২টি, মাদারবাড়িতে ২টি, পাঁচলাইশে ২টি এবং চন্দনপুরা, জয়পাহাড়, চান্দগাঁও, ষোলোশহর ও রামপুরায় একটি করে রয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব পাহাড়তলী ও হালিশহর মধ্যম নাথপাড়া এলাকায় বধ্যভূমিতে স্মৃতিচিহ্ন আছে। বাকিগুলোর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনের বধ্যভূমিতে স্মৃতিচিহ্ন নির্মাণ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
নগরীর হালিশহর নাথপাড়া ও পাহাড়তলীর ফয়’স লেক এলাকায় মহান বিজয় দিবস ও বুদ্ধিজীবী দিবস সামনে রেখে চসিকের পক্ষ থেকে রঙ লাগানো হয় পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে। নগরীর এই একটি বধ্যভূমি চসিকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। প্রতি বছর জাতীয় বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে এই বধ্যভূমি পরিষ্কার করা হয়।
এছাড়া সারা বছর অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে হালিশহর নাথপাড়া এলাকার বধ্যভূমিসহ পাহাড়তলী এলাকার এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি। এদিকে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পরও নগরীর পাহাড়তলী এলাকার বধ্যভূমির প্রয়োজনীয় জায়গা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে না দীর্ঘদিনেও।
এরই মধ্যে মারা গেছেন বধ্যভূমি সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অনেকে। কর্মসূচিতে বধ্যভূমি রক্ষায় রিটকারীদের অন্যতম প্রফেসর ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রামে মোট ১১১টি বধ্যভূমি থাকলেও একটি বধ্যভূমিও রক্ষা করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এই পাহাড়তলী বধ্যভূমি শুধু টিকে আছে আমাদের মামলার কারণে। ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী রায়ের বাজার ও পাহাড়তলী বধ্যভূমি রক্ষার নির্দেশ দিলেও এখনো তা হয়নি।’
প্রসঙ্গত, এই ১১১টি বধ্যভূমির মধ্যে নগরীতে রয়েছে ৬১টি। বাকি ৫০টি রয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও চট্টগ্রামের বধ্যভূমিগুলো অরক্ষিত। এটা দুঃখজনক। বধ্যভূমি রক্ষায় মন্ত্রণালয় থেকে বছরের পর বছর কেবল আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কার্যকর কিছুই হচ্ছে না। আমরা যারা বধ্যভূমি রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছি, তাদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন। যারা জীবিত আছেন তারাও যে শেষ পর্যন্ত বধ্যভূমি দখলমুক্ত দেখতে পাবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা আছে। তবে একটা কথা বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকাকালীন যদি চট্টগ্রামের বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত না হয় তাহলে আর কোনো দিন হবে না।’
বিএনএনিউজ/ রেহানা/হাসনা