বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : ভারতের বিহারে রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের নন-টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটাগরির গ্রুপ-ডি কর্মী নিয়োগের পরীক্ষার ফলে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভের জেরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর থেকে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বিহারের গয়া স্টেশন। বিহারের অনেক জায়গায় ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখায় এবং এ সময় একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ট্রেনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ফায়ার ব্রিগেডের দল। এ সময়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা কার্যত বেপরোয়া হয়ে ওঠায় বিষয়টি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অন্যদিকে, গয়া রেল স্টেশন চত্বরে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করেছে বিক্ষোভকারীরা।
উত্তেজিত ছাত্ররা বেশ কয়েকটি ট্রেনকে টার্গেট করে এবং শ্রমজীবী এক্সপ্রেসেরও ব্যাপক ক্ষতি করে। জাহানাবাদে ছাত্ররা রেল লাইন অবরুদ্ধ করে এবং এরপরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা পোড়ায়। একইসঙ্গে তারা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
এদিকে, আজ রেলওয়ে মন্ত্রণালয় এনটিপিএস এবং লেভেল-১ উভয় পরীক্ষা স্থগিত করেছে। রেল মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র এবং অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মতামত শুনবে এবং এর ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। এই প্রতিবেদনটি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। এরপর রেল মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রসঙ্গত, ওই ইস্যুতে গত সোমবারও বিহারের রাজধানী পাটনাসহ অনেক জায়গায় ছাত্ররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। বিক্ষোভের জেরে সোমবার পাটনায় ট্রেন চলাচল বাতিল করতে হয়। এরপর মঙ্গলবার রেলওয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়, এবং এতে বলা হয়, এ ধরনের দিশাহীন কাজকর্ম যারা করেছেন রেলওয়েতে তাদের নিয়োগ করা হবে না। অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে আজীবন নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
এদিকে, উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে বিক্ষোভ প্রদর্শনে শামিল ছাত্রদের ওপরে পুলিশের লাঠিচার্জ করার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা কেশবপ্রসাদ মৌর্য ওই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতি সংযমের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছাত্রদের নিয়ে বিরোধীদের রাজনীতি করা উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের ছদ্মবেশে যারা উপদ্রব সৃষ্টি করেছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি লাঠিচার্জের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। প্রতিবাদ করায় তাদেরকে চাকরিতে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে।
উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, ইলাহাবাদে কর্মসংস্থানের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলেছেন এমন নিরীহ ছাত্রদের উপর পুলিশের সহিংস হামলা লজ্জাজনক এবং গভীর নিন্দনীয়। বিজেপি সরকারের আমলে ছাত্রদের সাথে দুর্ব্যবহার বিজেপিকে ঐতিহাসিক পতনের দিকে নিয়ে যাবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছে সমাজবাদী পার্টি।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।