বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মন্নুজান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশীর ফেসবুক লাইভে এসে দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম প্রশাসনকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে বলেন, “লাইভে এসে তিনি যা বলেছেন, তা তার সীমার মধ্যে পড়ে না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে, তারা সেটি অভিযোগ করতে পারে—যদি তারা মনে করে বিষয়টি তাদের এখতিয়ারভুক্ত। তাই আমি শিক্ষার্থীদেরকে শালীনতা বজায় রেখে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাব।”
ছাত্রলীগ নেত্রীর সেই বক্তব্যকে অশালীন উল্লেখ করে রাবি উপ-উপাচার্য বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে কোনো কিছু না জেনে প্রশ্ন করা, এক ধরণের অশালীনতা ও সীমা বহির্ভূত কথা বলা। এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য আমি শিক্ষার্থীদেরকে অনুরোধ করছি।”
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মন্নুজান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশী।
ফেসবুক লাইভে শশী বলেন, “ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছোট করে প্রতিনিয়ত নিউজ করছে সাংবাদিকরা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কথা বলছে না। আপনারা যদি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশে না থাকেন, তাহলে আমি বলবো ভিসি-প্রোভিসি, প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টাকে আওয়ামী পরিষদ থেকে নিয়োগ দেওয়াই শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত।”
শশীর এমন বক্তব্যের পর, লাইভটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও কিছুক্ষণ পরই লাইভটি তার প্রোফাইল থেকে সরিয়ে নেন শশী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও এই লাইভ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
মূলত, গত বৃহস্পতিবার রাতে রহমতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না আক্তার তন্বীর ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে হলে থাকায় তাঁকে কক্ষ ছাড়ার নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। কিন্তু তিনি হল ছাড়েননি। পরদিন উল্টো হলের গেটে তালা দেন তামান্নাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাত্রলীগের নেত্রীরা। পরে মানবিক কারণে ওই নেত্রীকে হলে থাকতে দিয়েছেন হল প্রশাসন।
এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ঐশীর রুম সিলগালা করে হল কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা সংবাদ প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই, ফেসবুক লাইভে এসে সাংবাদিক ও প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন রাবি ছাত্রলীগের এই নেত্রী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এ বিষয়ে বলেন, “এই ধরনের অর্বাচীন বক্তব্য সুখকর নয়। এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। তবে আমাদের সবার কথা বলার আগে লক্ষ্য রাখা উচিৎ, আমি কী করছি, কি বলছি, আমার অবস্থান কি। তাছাড়া আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটেট হতে চাই না।”
ছাত্রলীগের ওই নেত্রী এমন মন্তব্য করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এটি নির্ভর করছে তার শিক্ষাগত জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা ও শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ কতোটুকু। আমাদের ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই ভালো। তাদের সঙ্গে আমি মিশেছি ও খেলাধুলা করেছি; তারা সবাই ভালো । তবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর (৫ শতাংশ) ‘ডাজেন্ট মেইক সেন্স’।
সাংবাদিকদের নিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রীর এমন বেফাঁস মন্তব্যের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক মনির হোসেন মাহিন বলেন, “সাংবাদিকরা কখনো খেয়াল-খুশিমতো লেখে না। একজন সাংবাদিক তার জায়গা থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ লিখবে, এটাই স্বাভাবিক। সেখানে কে ছাত্রদল, কে ছাত্রলীগ ও কে ছাত্র শিবির করে —সেটা ম্যাটার করে না।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান অভি বলেন, “সম্প্রতি মন্নুজান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশী ফেসবুক লাইভে এসে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে ধরনের প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে—সেটি রীতিমতো এক ধরণের উস্কানি। এভাবে চলতে থাকলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত একজন সাংবাদিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।”
বিএনএ/সাকিব, এমএফ/এইচ এ মুন্নী