বিএনএ ডেস্ক: সরকার ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, আওয়ামী লীগের সরকারের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচারের তাৎক্ষণিক উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এবং বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছে তা ধরে রেখে মাথা উঁচু করে বিশ্বব্যাপী চলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপপ্রচারের নেপথ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধী ও জাতির পিতার খুনিদের আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অর্থপাচারকারি নানা অপরাধীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বেশিরভাগকেই অপকর্মে জড়িত থাকার জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে বা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সরকার এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে অন্যদের সবক দিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের চরিত্র ও অপকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তাদের কথায় কর্ণপাত না করে আমাদের উন্নয়নকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে নিজ এলাকার কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবহিত করার পাশাপাশি তাদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখার আহ্বান জানান সরকার প্রধান। বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজেটের আকারের তুলনামূলক চিত্র দেখে তাদের দ্বারা কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বিচার করতে পারবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট ছিল ছয় লাখ কোটি টাকার ওপরে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছে। প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশ যা বলে তা করার ক্ষমতা রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে আসন্ন তীব্র খাদ্য সংকট সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যেহেতু একটি প্রকট খাদ্য সংকট আসন্ন, তাই দেশের কোন জমিই অনাবাদী রাখা যাবেনা। এ বিষয়ে দেশে থাকা আত্মীয় স্বজনদের সচেতন করার আহ্বান জানান তিনি।
ভোট কারচুপি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি গুম, খুন এবং দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্মের রাজনীতি চালু করা সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য শেখ হাসিনা বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন। বলেন, ‘ভোট কারচুপিতে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন ছিল। তারা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দল সবসময় জনগণের অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে বন্দী অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ এখন আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট বারবার অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস ও হত্যার সংস্কৃতির আশ্রয় নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ কখনই তাদের কর্মকাণ্ডে সাড়া দেয় না। কারণ তারা হত্যা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র ব্যবসাসহ প্রতিটি অপকর্মের সাথে জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সবসময় ন্যায়ের পক্ষে। তাই জাতির পিতা হত্যা মামলার বিচার করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সূচনা করেছে। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার না হওয়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও প্রাণবন্ত হয়েছে এবং উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের একজনও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে ১০ লাখ পরিবারকে বিনা খরচে বাড়ি দেয়া হয়েছে। জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন ভালো অবস্থায় আছে।
তিনটি ব্যাংকসহ প্রবাসীদের সুবিধার্থে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সংকটকালীন সময়ে দেশের পাশে থাকার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজ দেশে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
বিএনএ/এ আর
