বিএনএ ডেস্ক: বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৪ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা। বর্তমানে সেখানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে । মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হলেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক তারা।
প্রথম দিকে তাদের চোখে মুখে যে আতঙ্ক ছিল, এখন সেটি আর নেই। আশ্রিত এসব রোহিঙ্গার মুখে হাসি ফিরেছে।
দিন দিন ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছে তারা। নিজ দেশে ফিরতে পূর্ণ নাগরিক অধিকার, নিরাপদ পরিবেশের নিশ্চয়তাসহ রোহিঙ্গারা নানা দাবি-দাওয়া দিচ্ছে ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলো পরিচালনা করছেনও তারা। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকার পণ্য আছে। সেইসঙ্গে স্থানীয় শ্রমিকদের জায়গা দখল করে রোহিঙ্গারা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে কয়েক হাজার একর পাহাড় ও বনভূমি। নষ্ট হয়েছে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য। যতই দিন যাচ্ছে মাদকপাচার, মানবপাচার, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন ও অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে। বাংলাদেশে স্থায়ী হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেছেন, গত এক বছরে উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে ১২ বাংলাদেশি খুন হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের কাছে তারা কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন।তাদেরকে দ্রুত মিয়ানমারে ফেরাতে না পারলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। তাই প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজারের জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা, বাণিজ্য, গাড়ি পরিচালনাসহ নানা কাজে জড়িয়ে পড়ছে তারা। টাকার বিনিময়ে খুন এবং মাদক পাচার করছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। তারা এখন বাংলাদেশের জন্য বোঝা।
কিন্তু, চার বছরে, একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় স্বদেশ প্রত্যাবাসনে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও রোহিঙ্গাদের অনীহা ও মিয়ানমারের নানা পাঁয়তারার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে থমকে গেছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও।
রোহিঙ্গাদের দাবি, দেশে ফিরতে মিয়ানমারকে পূর্ণ নাগরিক অধিকার ও নিরাপদ পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলছেন,রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ডোনারদেরও অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারাও বুঝতে পেরেছে যে, বাংলাদেশ কতটুকু ছাড় দেবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, চীনের মধ্যস্ততায়, প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমারের নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ।
এদিকে, প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গা সমস্যাটি জিইয়ে রেখে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে।
বিএনএনিউজ/আরকেসি