বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যায় হটস্পট হয়ে আছে জেলার চার উপজেলা। উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি এই চার উপজেলায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলাগুলোতে শনাক্ত ৪৩ জনের মধ্যে মধ্যে হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ ১৩ জন শনাক্ত হয়। এছাড়া, সীতাকুণ্ডে ৬ জন, ফটিকছড়িতে ৫ জন ও রাউজানে ৩ জন করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (২৩ জুলাই) চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তদের মধ্যে ফটিকছড়ির ৬৩ জন, হাটহাজারীর ২৯ জন রাউজানের ১১ জন ও সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা রয়েছেন ১০ জন। ওই দিন চট্টগ্রামের চার উপজেলা মিলে করোনা শনাক্ত হয় মোট ১১৩ জনের।
এছাড়া চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ১৭ জুলাইয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তদের মধ্যে ৮ হাজার ৯৭১ জনই ‘করোনার হটস্পট’ জোন হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। এরমধ্যে হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪৫৬ জন, রাউজানে ১ হাজার ৯৪৪ জন, সীতাকুণ্ডে ১ হাজার ৮০৮ জন ও ফটিকছড়িতে ১ হাজার ৭৬৩ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। ওই দিন পর্যন্ত করোনা রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল হাটহাজারী। এ উপজেলায় সরকারি হিসাবে সেদিন পর্যন্ত ৬৪ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। একই দিন পর্যন্ত সীতাকুণ্ডে ৪৪, ফটিকছড়িতে ২৪ ও রাউজানে মৃত্যু হয় ২৩ জন করোনা রোগীর।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের উদাসীনতায় সামনের দিনগুলোতে করোনা আরও বেশি ভয়ংকর হতে পারে। আড্ডা কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারিভাবে নিদের্শনা থাকলেও তা মানার বালাই নেই। সংক্রমণ শুরুর দিকে সবার মাঝে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার যে প্রবণতা ছিল, বর্তমানে সেই প্রবণতা হ্রাসই পাচ্ছে। তাই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হওয়ার পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে কারোনা পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো নয়। নগরের সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে। যদি নিজ থেকেই আমরা সচেতন না হই, তাহলে এ সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। আর বাইরে আসতে হলে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। মাস্কের বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে। তা না হলে সামনের দিনগুলো আরও খারাপের দিতে যেতে পারে। নিজেদের মধ্যে সচেতনতা না থাকলে সরকারের শত উদ্যোগও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে গত বছরের ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৯ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক ব্যক্তি মারা যান। এখন পর্যন্ত করোনায় চট্টগ্রামে মারা গেছেন মোট ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ৫৩৯ জন নগরের ও ৩৩৫ জন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭৪ হাজার ৫৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ হাজার ৪৪০ জন নগরের ও ১৮ হাজার ১২২ জন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা।
এদিকে সারাদেশে শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। যা চলবে ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত। দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরআগে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত একই কারণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সেসময় মার্কেট-গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা। পরে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে আবার শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। এবারের বিধিনিষেধ চলাকালে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিএনএনিউজ/মনির