বিএনএ ঢাকা: ভয়ংকর ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে বাংলাদেশে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিন দিন আগে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারা যান ওই ব্যক্তির। মঙ্গলবার (২৫ মে) পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, মৃত ওই ব্যক্তি মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে বারডেম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিন দিন আগে ৬৫ বছর বয়সী এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিসে আক্রান্ত ছিলেন, তার কিডনির সমস্যাও ছিল। তিনি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছিলেন। চিকিৎসার সময় বোঝা যায়নি যে ওই ব্যক্তি মিউকোরমাইকোসিসে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুর পর এটি জানা গেছে।
এরআগে বারডেম হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. লাভলি বাড়ৈ গণমাধ্যমকে জানান, তাদের ল্যাবে দুইজনের শরীরে মিউকোরমাইকোসিস শনাক্ত হয়েছে। তাদেরকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বারডেমের ল্যাবরেটরিতে করোনা রোগীর শরীরের এবারই প্রথম রোগটি শনাক্ত হয়।
তিনি বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে অবস্থা গুরুতর হতে পারে। তাই তাদের সতর্কভাবে চিকিৎসা দিতে হয় বলে জানান ডা. লাভলি বাড়ৈ ।
বারডেম হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানান, গত ৮ মে ৪৫ বছর বয়সী এক রোগীর শরীরে মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর গত ২৩ মে ৬০ বছর বয়সী আরেক জনের শরীরেও ছাত্রাকজনিত রোগটি শনাক্ত হয়।
সম্প্রতি ভারতে বিরল ছত্রাকজনিত এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দুজন আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেল। করোনার চেয়েও এর মৃত্যুহার ২৫ গুণ বেশি। করোনা আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগী ও যাদেরকে স্টেরয়েড দেয়া হয়েছে, তারা এর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
নাক-মুখ দিয়ে প্রবেশ করে ব্ল্যাক ফাংগাস। আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ-মুখ ফুলে ওঠে। নাকের ভেতর ও জিহ্বায় কালো দাগ পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বরও দেখা দেয়। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে রোগ সেরে যায়। চোখ আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে অন্ধত্বের শিকার হয় রোগী। আর ছত্রাক মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে রোগীকে বাঁচানো যায় না। ভারতে এই রোগে আক্রান্তদের ৫০ ভাগই মারা গেছেন। অথচ করোনায় মৃত্যুহার দুই শতাংশের বেশি নয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সব বয়সী মানুষের এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি না থাকায় এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। তবে, কোভিড-১৯ ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী, যারা স্টেরয়েড নিচ্ছেন, ক্যান্সার আক্রান্ত অথবা ক্যান্সারে কেমোথেরাপি চলে, এমন রোগীর প্রতিরোধ শক্তি কম। এছাড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন, এমন রোগীরাই সবচেয়ে বেশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন বলে জানান তারা।
এদিকে, দেশে প্রথমবারের মতো ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে কোনো তথ্য জানা নেই। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, দেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হওয়ার কোনো তথ্য এখনও পাননি তারা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও করণীয় নির্ধারণ করছেন। শিগগিরই রোগটির চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে গাইডলাইন দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিএনএনিউজ/আরকেসি