হাছিনা মুন্নী, বিএনএ, ঢাকা: শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ প্রবল শক্তি নিয়ে এগিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পূর্ণিমা। ৩০ বছর পর কোন ঘূর্ণিঝড় পূর্ণিমার দেখা পাচ্ছে! ফলে বঙ্গোপসাগর ক্রমে বিক্ষুব্ধ হয়ে রাক্ষুসে রূপ ধারণ করছে। ‘ইয়াস’ যখন সাগরে তার রাক্ষুসে তান্ডব চালাবে, তখন আকাশে দেখা যাবে চন্দ্রগ্রহণ ও সুপারমুন। উল্লেখ, চন্দ্রগ্রহণে পৃথিবীর কাছাকাছি চাঁদ চলে আসায় তা দেখতে তুলনামূলক বড় হয়। তখন চাঁদের উজ্জ্বলতা তুলনামূলক বেশি হয়। সেই চাঁদকে সুপার মুন বলা হয়
সারাদেশ থেকে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে আগামী বুধবার ( ২৬ মে)। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৯ মিনিটে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৫১ মিনিটে শেষ হবে। সারা দেশ থেকে চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে।।
ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৫১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে। ময়মনসিংহে সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শেষ হবে ৭টা ৫৩ মিনিটে।
চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে শেষ হবে। সিলেটে সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৪৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে। খুলনায় সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে।
বরিশালে সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে। রাজশাহীতে সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৫৯ সেকেন্ডে। রংপুরে সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৫৯ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে।
চাঁদ যেমন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে তেমন পৃথিবীও সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এইভাবে একটা সময় চাঁদ, সূর্য, পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে এক সরলরেখায় আসে। যখন একই সরলরেখায় পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে, তখন পৃথিবীর ছায়ার জন্য চাঁদে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, ফলে চাঁদকে তখন কিছু সময়ের জন্য দেখা যায় না।
অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠের কোনো দর্শকের কাছে চাঁদ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন অন্ধকার অংশটাকে বলা হয় চন্দ্রগ্রহণ। আর এই সময় পৃথিবী, সূর্যকে আংশিক ঢেকে নিলে পৃথিবীর জন্য চাঁদকে আংশিক দেখা যায় না, একে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়। পৃথিবী সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে নিলে পৃথিবীর জন্য চাঁদকে পুরোপুরি দেখা যায় না, একে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়।
চন্দ্রগ্রহণ ও সুপারমুনকে সামনে নিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ‘ইয়াস’ পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ভারতের উড়িষ্যার উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার। ঝড়ের কেন্দ্রের কাছে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনুকূল আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হয়ে আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং ২৬ মে ভোর নাগাদ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পৌঁছাতে পারে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঘণ্টায় প্রায় ১০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসারের দিকে যাচ্ছে। ঝড়টি গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৬০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থান করছিল। এখন তা সরে গিয়ে উড়িষ্যার দিকে যাচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে ছিল, এখন তা আরও এগিয়ে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছে।
একইভাবে বালাসোর থেকে ছিল ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে, এখন আছে ৪৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে এবং পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব দীঘা থেকে ছিল ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এখন অবস্থান করছে ৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণে। এছাড়া বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে।
প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, আরও তীব্রতর হয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে এটি উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। আরও তীব্র আকার ধারণ করে উত্তর উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের নিকটবর্তী উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে পৌঁছাতে পারে। আগামীকাল ২৬ মে বুধবার ভোরে চাঁদবালি-ধামড়া বন্দরের খুব কাছে চলে যাবে। এটা বুধবার দুপুরে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে উত্তর উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, প্যারাদ্বীপ এবং বালাসোরসহ সাগরের আশেপাশের দ্বীপের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর।
ওমানের নামকরণ করা ‘ইয়াস’ আগামীকাল বুধবার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। পথে দিক পরিবর্তন না করলে বাংলাদেশ সরাসরি মুখের আঘাতে পড়বে না। তবে লেজের আঘাতে মারাত্বক আহত হতে পারে বাংলাদেশের খেপুপাড়া, খুলনাসহ আশেপাশের এলাকায়। ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে সুন্দরবন। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল জলোচ্ছাসের প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে আবহাওয়াবিদরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘূর্ণিঝড় ইয়াস থেকে জানমাল রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোকে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের কাছের সাগর বিক্ষুব্ধ অবস্থায় আছে। দেশের চার সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে অবস্থান না করতে নির্ষেধ করা হয়েছে।
বিএনএ/ মুন্নী/ ওয়াই এইচ/ এজিএন