26 C
আবহাওয়া
১:১৫ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ২৬, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » নোয়াখালী-৬: এনসিপি’র হান্নান মাসউদ কত ভোট পাবেন?

নোয়াখালী-৬: এনসিপি’র হান্নান মাসউদ কত ভোট পাবেন?

নোয়াখালী-৬: এনসিপি’র হান্নান মাসউদ কত ভোট পাবেন?

।। রেহেনা ইয়াছমিন ।।

নোয়াখালী-৬ সংসদীয় আসনটি বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৭৩ তম আসন। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্য মাত্র ৪টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এই নির্বাচনগুলো ছিল অংশগ্রহণমূলক। জনগণ তাদের নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছে।

আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে। এমনটা ধরে নিয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি শুরু করেছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশিরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

YouTube player

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর নোয়াখালী-৬ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী এবং সদ্য আত্মপ্রকাশ করা এনসিপি’র সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় নোয়াখালী-৬ হাতিয়া সংসদীয় আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ২ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৬৩ হাজার ৬ শত ৫৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যক্ষ ওয়ালী উল্লাহ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৫ শত ৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আলী। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ৬ শত ৫৫ ভোট।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির মো. ফজলুল আজিমকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। প্রসঙ্গত, ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ২ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৫ হাজার ১৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির মো. ফজলুল আজিম বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ১ শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অধ্যক্ষ ওয়ালী উল্লাহ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ৩ শত ৫৮ ভোট।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী বিজয়ী হন। ঘড়ি প্রতীকে তিনি পান ৩৭ হাজার ৪ শত ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অধ্যক্ষ ওয়ালী উল্লাহ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৩৬ ভোট।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৮ শত ৩৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৭৬ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফজলুল আজিম বিজয়ী হন। হরিণ প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৪ শত ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েশা ফেরদাউস। কলস প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৫ শত ৬৬ ভোট।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আয়েশা ফেরদাউস বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আয়েশা ফেরদাউস, বিএনপির মো. ফজলুল আজিমসহ ৮জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। কিন্তু এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। ভোটের আগের দিন রাতেই প্রশাসনের সহযোগীতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন প্রতিটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে সিল দিয়ে ভোটের বাক্স ভর্তি করে রাখে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আয়েশা ফেরদাউসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি জামায়াত, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। ডামি খ্যাত এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে জনরায়ের প্রতিফলন হয়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নোয়াখালী-৬ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪২.৯৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫১.২০%, বিএনপি ৭.৫১%, জাতীয় পাটি ২৯.৩১%, জামায়াতে ইসলামী ৯.৭৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.২২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬২.৮৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.১৮%, বিএনপি ৩৫.৪৬% জাতীয় পাটি ২৯.৮৩%, জামায়াতে ইসলামী ১.৫২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.০১% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৯.৪৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.৭৭%, ৪ দলীয় জোট ২৮.১১%, জাতীয় পাটি ০.১৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৮.৯৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৮.৪১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ৪ দলীয় জোট ০.৪৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৯৯.৫২% ভোট পায়।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম সংসদে আওয়ামী লীগ, সপ্তম সংসদে বিএনপি, অষ্টম ও নবম সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন।

২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৭ মাসের মাথায় ছাত্র-জনতার গণঅভূত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। ক্ষমতাসীন হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বদলে যায় প্রেক্ষাপট। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে যায়। নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারে। তবে নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূল হলে আওয়ামী লীগও নির্বাচনে অংশ নিবে, সেই ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী অথবা তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে।

বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল আজিম অথবা হাতিয়া উপজেলা বিএনপি সভাপতি একেএম ফজলুল হক খোকন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর বাইরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নাওয়াজ প্রার্থীতা চাইতে পারেন।

জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও দাওয়া সম্পাদক, শাহবাগ থানার আমীর এডভোকেট মাহফুজুল হককে মনোনয়ন দিয়েছে।

এই আসনে কিংস পার্টির তকমা পাওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় দেখা যাবে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদকে। তার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। পড়ালেখা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতিমধ্যে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ শ্রমিক সংঘের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ‘মোংলা মাসুদ’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন।

গত ২২ মার্চ থেকে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন। এলাকায় বিভিন্ন পথসভায় বত্তব্য রাখেন। এই সব জনসভায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির সমালোচনা করেন। গত ২৪ মার্চ (সোমবার) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার জাহাজমারা বাজারে পথ সভা করেন মাসউদ। সেই পথসভায় স্থানীয় বিএনপির লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এতে হান্নান মাসউদসহ ৫ জন আহত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনসিপি’র আব্দুল হান্নান মাসউদ এলাকায় তেমন পরিচিত নয়। এলাকায় তার তেমন যাওয়া-আসাও নেই। গত বছরের জুলাই আন্দোলনের পর পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন। তবে হান্নান মাসউদ হাতিয়া দ্বীপের মানুষের জন্য নৌ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ‘সি-ট্রাক’ এর ব্যবস্থা করতে বেশ তৎপর রয়েছেন। নির্বাচনের আগে যদি ‘সি ট্রাক’ ব্যবস্থা করতে পারে তা হলে এলাকার ভোটের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় আসবেন। তবে নির্বাচনে কত ভোট পাবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেক্ষেত্রে এনসিপি’র প্রার্থী আব্দুল হান্নান মাসউদের জামানত বাজেয়াপ্ত হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। এখানকার মানুষ দলের চেয়ে ব্যক্তিকে বেশি প্রাধ্যান্য দিয়ে থাকে। ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমানে সমান। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সার্বিক পরিস্থিতি ভিন্ন। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে ফেবারিট মনে করছেন এলাকার ভোটাররা।

বিএনএনিউজ/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ