29 C
আবহাওয়া
৭:২০ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ১৩ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

১৩ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচার

বিজিবি

বিএনএ ডেস্ক, ঢাকা: ১৩ বছরেও শেষ হয়নি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার। তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, মামলাটির বিচার দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। আসামিপক্ষ বলছে, হত্যা মামলায় অনেক আসামি খালাস পেয়েও বিস্ফোরক মামলার কারণে তারা জেলে আছেন। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হলে তারা মুক্তি পাবেন।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় দেশ হারায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। সে দিনের সেই ঘটনায় পুরো জাতি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে।

পিলখানায় শহীদ সেনা অফিসাররা হচ্ছেন-

১. শহীদ মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, ২. শহীদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হোসেন,৩. শহীদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল বারী, ৪. শহীদ কর্নেল মো. মজিবুল হক,৫. শহীদ কর্নেল মো. আনিস উজ জামান, ৬. শহীদ কর্নেল মোহাম্মদ মশিউর রহমান, ৭. শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিক, ৮. শহীদ কর্নেল মোহাম্মদ আখতার হোসেন, ৯. শহীদ কর্নেল মো. রেজাউল কবীর, ১০. শহীদ কর্নেল নাফিজ উদ্দীন আহমেদ, ১১. শহীদ কর্নেল কাজী এমদাদুল হক, ১২. শহীদ কর্নেল বিএম জাহিদ হোসেন, ১৩. শহীদ কর্নেল সামসুল আরেফিন আহাম্মেদ, ১৪. শহীদ কর্নেল মো. নকিবুর রহমান, ১৫. শহীদ কর্নেল কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, ১৬. শহীদ কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ, ১৭. শহীদ কর্নেল মো. শওকত ইমাম, ১৮. শহীদ কর্নেল মো. এমদাদুল ইসলাম, ১৯. শহীদ কর্নেল মো. আফতাবুল ইসলাম, ২০. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল এনশাদ ইবন আমিন, ২১. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুল আজম, ২২. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী রবি রহমান, ২৩. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ নিয়ামতউলাহ, ২৪. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. বদরুল হুদা, ২৫. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল এলাহী মন্জুর চৌধুরী, ২৬. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এনায়েতুল হক, ২৭. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু মুছা মো. আইউব কাইসার, ২৮. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সাইফুল ইসলাম, ২৯. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ লুৎফর রহমান, ৩০. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান, ৩১. শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান খান, ৩২. শহীদ মেজর মো. মকবুল হোসেন, ৩৩. শহীদ মেজর মো. আব্দুস সালাম খান, ৩৪. শহীদ মেজর হোসেন সোহেল শাহনেওয়াজ, ৩৫. শহীদ মেজর কাজী মোছাদ্দেক হোসেন, ৩৬. শহীদ মেজর আহমেদ আজিজুল হাকিম, ৩৭. শহীদ মেজর মোহাম্মদ সালেহ, ৩৮. শহীদ মেজর কাজী আশরাফ হোসেন, ৩৯. শহীদ মেজর মাহমুদ হাসান, ৪০. শহীদ মেজর মুস্তাক মাহমুদ, ৪১. শহীদ মেজর মাহমুদুল হাসান, ৪২. শহীদ মেজর হুমায়ুন হায়দার, ৪৩. শহীদ মেজর মোঃ আজহারুল ইসলাম, ৪৪. শহীদ মেজর মো. হুমায়ুন কবীর সরকার, ৪৫. শহীদ মেজর মোঃ খালিদ হোসেন, ৪৬. শহীদ মেজর মাহবুবুর রহমান, ৪৭. শহীদ মোঃ মিজানুর রহমান, ৪৮. শহীদ মেজর মোহাম্মদ মাকসুম-উল-হাকিম, ৪৯. শহীদ মেজর এস এম মামুনুর রহমান, ৫০. শহীদ মেজর মোঃ রফিকুল ইসলাম, ৫১. শহীদ মেজর সৈয়দ মো. ইদ্রিস ইকবাল, ৫২. শহীদ মেজর আবু সৈয়দ গাযালী দস্তগীর, ৫৩. শহীদ মেজর মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন, ৫৪. শহীদ মেজর মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম সরকার, ৫৫. শহীদ মোস্তফা আসাদুজ্জামান, ৫৬. শহীদ মেজর তানভীর হায়দার নূর, ৫৭. শহীদ ক্যাপ্টেন মোঃ মাজহারুল হায়দার।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় এবং ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তি হয়। এ ঘটনার বিস্ফোরক আইনে করা মামলা এখনো বিচারাধীন।

রাজধানীর বকশীবাজারের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এ মামলার কার্যক্রম চলছে। ১১৬৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত মামলাটিতে ২১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ গত ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। আগামী ৯ ও ১০ মার্চ মামলাটি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ।

মামলা সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার নিম্ন আদালতের পর হাইকোর্টে পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। নিয়মিত সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছিল। মাঝে দুই বছর করোনার কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ একটু বিলম্বিত হয়। এখন আবার আদালতের কার্যক্রম চলছে। সাক্ষীও আসছে। ২১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৩০০-৩৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করে আদালত রায় ঘোষণা করতে পারবেন বলে আশা করছি।’

আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘১৩ বছর হয়ে গেল বিস্ফোরক আইনের মামলাটির বিচার শেষ হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষই হত্যা মামলায় রায় পাওয়ার পর বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির করার চেষ্টা করছে না। হত্যা মামলার খালাসপ্রাপ্ত ২৭৮ আসামি বিস্ফোরক মামলারও আসামি। হত্যা মামলায় খালাস পেয়েও বিস্ফোরক আইনের মামলার কারণে তারা মুক্তি পাননি। জামিন পাচ্ছেন না। তাই উচিত হবে যারা হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন তাদের জামিন দেয়া, না হয় বিস্ফোরক আইনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। আমরা আশা করছি, বিস্ফোরক মামলায় তারা খালাস পাবেন। কিন্তু কবে মামলাটি নিষ্পত্তি হবে।’

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দাবি-দাওয়ার নামে পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) কিছু উচ্ছৃঙ্খল জওয়ান বিদ্রোহ শুরু করে। এসময় তাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। পিলখানা ট্র্যাজেডির পর বিডিআরের নাম, লোগো ও পতাকা পরিবর্তন করা হয়। এ বাহিনীর নাম পাল্টে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি। পরিবর্তন করা হয় বাহিনীর আইন।

এদিকে পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে প্রথমে চকবাজার থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়। ২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি।

২০১১ সালের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় চার্জগঠন করে বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। হত্যা মামলায় চার বছর ৮ মাসে ২৩২টি কার্যদিবস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা হয়।

রায়ে ঢাকার নিম্ন আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চার জনকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে আপিল চলার সময় কারাগারে থাকা দুজন মারা যান। খালাস পান ১২ আসামি।

শোকাবহ দিবসের কর্মসূচি

পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে আজ শুক্রবার শাহাদাতবার্ষিকী পালন করবে বিজিবি। দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে, পিলখানাসহ বিজিবি’র সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টায় বনানীর সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ৩ বাহিনীর প্রধান (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একসঙ্গে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সকল স্থাপনায় বিজিবি পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবি’র সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবে।

বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ