বিএনএ,দিনাজপুর: উত্তরের শষ্য ভান্ডার দিনাজপুরে এবার আলু’র ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। কারণ আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না কৃষক। প্রতি কেজি আলু ৬ থেকে ৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এরপরও ক্রেতা নেই।
জেলার হাট-বাজার গুলোতে আলুর স্তুপ জমছে। এতে কম দামে ক্রেতারা আলু কিনতে পেরে একটু স্বস্তি পেলেও কৃষক পড়েছেন বিপাকে।
গত বছর অধিক দামে আগাম আলু বিক্রি করে লাভবান হয়েছিলেন তারা। তাই এবারও লাভের আশায় আগাম আলু চাষে ঝুঁকেছিলেন। কিন্তু বাজারে ধস নামায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত বছর এই সময় প্রতি কেজি আলু মাঠেই ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। আর এবার সেই আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬ থেকে ৭ টাকায়।
ভালো দাম না পাওয়ায় মাঠ থেকে আলু তুলছেন না কৃষক। এতে ক্ষেতের আলু ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। দিনাজপুরের অসংখ্য কৃষকের এমন অবস্থা।
জেলায় এবার জেলায় ৪৮ হাজার ৫শ ৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আরও অনেক বেশী জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ২শ ৩২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে আগাম জাতের আলু। মাঠে বর্তমান সময়ে গ্র্যানোলা জাতের সাদা ও এস্টারিক্স জাতের লাল আলু পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে লাল আলুর চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম কিছুটা বেশি। আর সাদা আলুর বাজার রাজধানীসহ অন্য জেলায় হওয়া কারণে অন্য জেলার চাহিদার ওপর নির্ভর করে দাম পায় কৃষক। বর্তমানে সাদা আলু ৬ থেকে ৭ টাকা ও লাল আলু ৭ থেকে ৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জের পরেই আলু চাষে দিনাজপুর জেলার অবস্থান। সে হিসেবে দেশে আলু উৎপাদনে এই জেলার অবস্থান দ্বিতীয়। প্রতি বছরই দিনাজপুরে আলু চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলাতে সরবরাহ করা হয় এখানকার আলু। সাধারণত মাটিতে এক বার আলু রোপণ করলে এক বার ফলন পাওয়া পাওয়া গেলেও এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। কৃষকরা এবার দুইবার আলু রোপণ করে ফলন পাচ্ছেন মাত্র এক বার। সে কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া বাজার অবস্থা ভালো না থাকায় লোকসানে পড়েছেন তারা। আগাম আলু রোপণের কয়েকদিন পরেই বৃষ্টি হয়, তাই রোপণকৃত আলু মাঠেই পঁচে যায়। আবারও লাভের আশায় সেই জমিতে আলু রোপণ করেন কৃষক।
সদর উপজেলার উলিপুর এলাকার আলু চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি ছিল, ফলে কম ফলনেও ভালো লাভ হয়েছিলো। এবার বেশি ফলনেও লোকসান হচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা, আসলও তোলা সম্ভব হচ্ছেনা। একারণে ক্ষেতের আলু ক্ষেতেই পড়ে আছে।
আলু চাষি মিনারুল ইসলাম জানালেন, প্রথমবার তিনি ২ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু কদিন পর বৃষ্টির কারণে সেগুলো পঁচে যায়। আবারও সেই জমিতে আলু রোপন করেছেন। এতে খরচ বেড়ে গেছে। এখন ৫ থেকে ৬ টাকা দরে আলু বিক্রি করলে অনেক লোকসান হবে।
নাটোর থেকে মৌসুমী আলু ব্যবসায়ী মনোয়ার বলেন, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন জেলার আলু এক সঙ্গে বাজারে আসায় দিনাজপুরের আলুর চাহিদা কিছুটা কম। রাজধানীর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট জেলার বিভিন্ন আড়ৎ থেকে কোনো অর্ডার পাওয়া যাচ্ছেনা। আগে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক আলু পাঠানো হতো। এখন ৫ থেকে ৬ ট্রাকের বেশি পাঠানো যাচ্ছেনা। অনেক আলু বেশি দামে কেনা আছে, কিন্তু দাম কমে যাওয়ার কারণে বিক্রি হচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানিয়েছেন, সময়ের ব্যবধানে আলুর দাম পাবেন কৃষক। গত বছরের বাড়তি আলুর মজুদ শেষে হলে বাজার অবস্থা ঠিক হবে। সেইসঙ্গে আলুর ফলন ভালো হলে চাষিদের লোকসান পুষিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
বিএনএনিউজি/এস শাহী, আরকেসি