।। এনামুল হক নাবিদ।।
আগস্টের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুথানের পর সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিগত পতিত সরকারের দোষরদের সরানো হচ্ছে। গত তিন মাসে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গুলোতে পরিবর্তনের জন্য সংস্কার শুরু হলেও সংস্কারের কোন ধরণের উদ্যোগ দেখা যায়নি রাষ্টায়ীত্ব সারকারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল) এ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এরই মধ্যে কারখানায় শ্রমিক অস্থিরতার জন্য নানাভাবে পরিকল্পনা করার বিভিন্ন ছক কষছে আওয়ামী পন্থী শ্রমিক নেতারা। ইতি মধ্যে দেশের সার সংকট মেটাতে সরকার সার আমদানি করছে বিভিন্ন দেশ থেকে । এর মধ্যে সুখবর হচ্ছে সচল রাখতে পারলে উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান সিইউএফএল দেশের সার ঘাটতি মেটাবে অনেকটা। তবে দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ৮মাস বন্ধ থাকার পর গত অক্টোবর থেকে সচল থাকা কারখানা বন্ধ করতে নানা পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগের এই দুই শ্রমিক নেতা। বিনময়ে কর্তৃপক্ষকে বেকায়দায় ফেলা ও টিকাদার প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে অর্থ আদায় করা ও রাজনৈতিকভাবে অতীতের মত প্রভাব বিস্তার করা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিইউএফএল সিবিএ অতীতেও নিয়ন্ত্রণ করেছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি। আর সিবিএ নেতা হিসেবে সব কলকব্জা নাড়াচাড়া করেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এমরান খান। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী শ্রমিক লীগের সহসভাপতি আবুল বসরও আওয়ামী লীগের হয়ে দুর্নীতির আখড়া হিসেবে রুপান্তর করেছে বিসিআইসির কেপিআই১ গ্রেডের
প্রতিষ্ঠান এই সিইউএফএলকে।
এই দুই শ্রমিক নেতা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের জেলা উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা হওয়ার কারণে এসব করার সুযোগ পেয়েছে। এছাড়াও তারা দুজনই কারখানা পাশ্ববর্তী স্থানীয় বাসিন্দা। তবে বর্তমান সংস্কার পন্থী শ্রমিক কর্মচারীদের অভিমত দীর্ঘ ১৫ বছর এই প্রতিষ্ঠানকে লুটপাট করেছে তারা। এবং তাদের সহযোগিতায় শত শত কোটি টাকা পাচার করেছে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ভাই আনিসুজ্জামান রনি। এখন তারা আবার কারখানায় অস্থিরতা তৈরী করে যাচ্ছে। এত কিছুর পর কিভাবে এখনো তারা বহাল তবিয়তে থাকে প্রশ্ন সংস্কার পন্থী শ্রমিক কর্মচারীদের।
দেখা গেছে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সারাদেশের মত আনোয়ারা উপজেলায়ও আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কোথাও হদিস নাই। তবে সিইউএফএল সিবিএর নেতৃত্ব নিতে মরিয়া এই দুই আওয়ামী লীগ নেতা।
সূত্র বলছে ,কারখানার উচ্চ পদস্থ কিছু কর্মকর্তা তাদের পদে বসিয়ে লুটপাট করতে মরিয়া । এছাড়াও পুরো সিইউএফএল, ডিএফসিএল, কাফকোসহ সারকারখানা গুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে নানাভাবে পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের এই দুই নেতা। এই দুই নেতার নেপথ্যে ইতিমধ্যে শ্রমিক আন্দোলন করেছে কতিপয় কিছু শ্রমিক। তার সাথে যোগ দিয়েছে স্থানীয় যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের কর্মীরা। অনুসন্ধানে এমন তথ্য ওঠে আসে। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো কারখানা অস্থির করতে নানানভাবে ষড়যন্ত্র করলেও সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ বিসিআইসি এখনো তাদের ব্যাপারে মুখ খুলছে না।
সূত্র বলছে, আন্দোলনের জন্য শ্রমিকদের নানাভাবে সংগঠিত করতে একাধিকবার গোপন বৈঠকও হয়েছে। টাকার বিনিময়ে বিএনপির একজন সহযোগিতা নেওয়ারও খবর পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগের নেতা আজিজ নামের এক বড় টিকাদার এখানে টাকা ইনভেস্ট করছে ।
এই দুই নেতার অতীত কর্মকান্ডের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এর আগেও ২০২২ সালে বিসিআইসির নির্দেশনা ও শ্রম আইন অনুযায়ী সিইউএফএলে ওভারটাইম ভারসাম্য করে তৎকালীন কারখানায় এমডি শহীদুল্লাহ। সিবিএর নেতা ইমরান খানের নেতৃত্বে সিইউএফএলের এমডিকে ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে নিয়ে কারখানায় উত্তেজেনা সৃষ্টি করে বেশ কিছু শ্রমিক নেতা। এরই প্রেক্ষিতে ( ২২ সালের ২৭ অক্টোবর) বিসিআইসির উপ-কর্মচারী প্রধান (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশতাক আহমেদ স্বাক্ষরিত দপ্তরাদেশে ইমরান খান সহ শ্রমিকের বদলির আদেশ দেয়া হয়। তার মধ্যে কারখানার এইচএসও মো. এমরান খানকে বাড়বকুণ্ড চিটাগাং কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজে, এইচএসও-১ মো. আমির হোসেন, এসও-১ সুমন কান্তি দেবনাথ ও এসও ২ মো. তৌহিদুল আলমকে সুনামগঞ্জ ছাতক সিমেন্ট কোম্পানী লি: এ বদলির আদেশ দেয়া হয়। এরা সবাই ছিল আওয়ামী লীগ নেতা।
বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল) কারখানা চট্টগ্রামে আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত।
দীর্ঘ আটমাস পর পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে চিটাগাং ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল)। এবছরের (১৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা থেকে কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন চলছে। যান্ত্রিক ত্রুটি ও গ্যাস সংকটের কারণে আটমাস বন্ধ ছিল উৎপাদন। এতে দৈনিক ৩ কোটি টাকার ইউরিয়া উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে এই উৎপাদন কতদিন স্থায়ী হবে তা বলতে পারেনি সিইউএফএল কতৃপক্ষ। তারা বলছে কখন ত্রুটি দেখা দিবে বলতে পারছি না। এর মধ্যে যদি ফের গ্যাস না দেওয়া হয় তাও বন্ধ করে দিতে হবে।
এদিকে গ্যাস সংকট যান্ত্রিক ত্রুটির নামে খানিক বন্ধ খানিক উৎপাদনে সচল সিইউএফএল। এরই মধ্যে বিগত দুই তিন মাসে সিইউএফএল সার পরিবহণ ও অন্যান্য ব্যবসা নিতে একাধিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। আর আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে বিভিন্ন টিকাদার প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতারা। তবে শ্রমিক আন্দোলনের উসকানির হোতা এই দুই আওয়ামী লীগ নেতা।
দলীয় সূত্রে জানা যায় এমরান খান দক্ষিণ চট্টগ্রামের সেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আর আবুল বসর উপজেলা শ্রমিক লীগের সহসভাপতি। সিইউএফএল সূত্র জানা যায় এমরান খান উৎপাদন বিভাগের বাল্ক শাখার এইচ,এস,ও আবুল বসর এম টি এস বিভাগের ইনস্ট্রুমেন্ট শাখার রেকর্ড শর্টার।
এদিকে গত তিন মাসে সিইউএফএল সার পরিবহণ এলাকায় একাধিক শ্রমিক আন্দোলন ও সিইউএফএল কে কেন্দ্র করে আন্দোলন হয়েছে। এসবের নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামী সহযোগী সংগঠনের এই দুই নেতা। আওয়ামী লীগের আমলে এমডিকে অবরুদ্ধ করে বদলি হলেও পরে অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানমদ এর সুপারিশে ফের সিইউএফএল এসে এই এমরান খান । সূত্র বলছে সরকার পতনেরর পর থেকে আওয়ামী পন্থী টিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে সমন্বয় করে এই আন্দোলন গড়ে তুলেছে তারা।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক সিইউএফএল কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতারা জানান সিইউএফএল একটি লাভ জনক প্রতিষ্ঠান হলেও এই দুই সিবিএ নেতার মাধ্যমে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ভাই আনিসুজ্জামান রনি লুটপাট করেছে। বিদেশে শত কোটি টাকা পাচার করেছে। এখন এই আওয়ামী দুই নেতা কারখানায় অস্থিরতার জন্য নানাভাবে ছক কষছে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ ওদের দ্রুত বদলি করা। ওরা ক্ষমতা থাকা অবস্থায় এমডিসহ একাধিক কর্মকর্তা ও শ্রমিক কর্মচারীর ওপর হামলা করেছে। তাদের বদলি করে এখনি কারখানায় উৎপাদন কাজ নিরাপদ করা।
এ বিষয়ে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, কারখানায় কোন রকম বিশৃঙ্খলা করতে না পারে তার জন্য আমরা সবসময় নজরদারি রাখছি। তবে এমরান খানের অতীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হামলার বিষয়টি শিকার করে তিনি বলেন, অতীতেও তিনি এরকম কাজের সাথে জড়িত ছিলেন তখন আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। শ্রমিকদের নিয়ে কোন প্রকার এসব কাজ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনএনিউজ/ আরএস