বিএনএ,রিপোর্ট: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন, তিনি দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার জন্য পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাবেন, যাই ঘটুক না কেন। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
রয়টার্স জানায়, জেনারেল ওয়াকার বলেন, নোবেল পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন থাকবে। তিনি বলেন, ‘যা কিছু ঘটুক, আমি ইউনূসের পাশে থাকব যাতে তিনি তার মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।’
উল্লেখ্য, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কার এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, গণতন্ত্রে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় দেড় বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, এবং এ জন্য সকলকে ধৈর্য ধরার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে তার প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হয় এবং তাদের মধ্যে খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
রয়টার্স জানায়, গত জুলাই মাসে চাকরির কোটা ইস্যু নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনে হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তাক্ত অধ্যায়। কিন্তু বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে। তবে কিছু প্রশাসনিক ক্ষেত্র এখনো সঠিকভাবে কাজ করছে না।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, তার লক্ষ্য হলো সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখা এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে রাখা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে চাকরির কোটা নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনে এক হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে রক্তাক্ত অধ্যায়।
ওই গোলযোগের পর ঢাকার রাস্তাগুলো এখন শান্ত হয়ে এসেছে। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর বেসামরিক প্রশাসনের কিছু কিছু অংশ এখনো যথাযথভাবে কাজ করছে না।
প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ বাহিনী এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দেশব্যাপী পদক্ষেপ জোরদার করেছে।
ক্যারিয়ার পদাতিক বাহিনীর অফিসার ওয়াকার রয়টার্সকে বলেন, তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না।
তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছু করব না, যা আমার সংস্থার জন্য ক্ষতিকর হবে। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।’
হাসিনার বিদায়ের পর সরকারের ব্যাপক সংস্কারের প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীতেও অন্যায়কারী সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জেনারেল ওয়াকার বলেন, অনেক সৈনিককে ইতোমধ্যেই শাস্তি দেয়া হয়েছে। তিনি অবশ্য বিস্তারিত কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে কর্মরত কোনো সদস্য দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব।’ তিনি বলেন, কোনো কোনো সামরিক কর্মকর্তা সীমা লঙ্ঘন করে থাকতে পারেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে সেনাবাহিনীকে তিনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখতে চান।
উল্লেখ্য, এক লাখ ৩০ হাজার সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম অবদান রক্ষাকারী।
জেনারেল ওয়াকার সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ব্যাপারে বলেন, ‘এমনটা কেবল তখনই ঘটতে পারে, যখন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য থাকে, যেখানে সেনাবাহিনী সরাসরি থাকবে প্রেসিডেন্টের অধীনে।’
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। এটি কার্যত প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণেই থাকে।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চলমান সাংবিধানিক সংস্কারে এ ব্যাপারে কিছু সংশোধন ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়। কোনো সৈনিক কোনোভাবেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হবে না।’
বিএনএ, এসজিএন/এইচমুন্নী