28 C
আবহাওয়া
৬:৩৯ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ৭০ লাখ টাকা দিয়েও ভারতে পালাতে পারেনি বিচারপতি মানিক !

৭০ লাখ টাকা দিয়েও ভারতে পালাতে পারেনি বিচারপতি মানিক !


বিএনএ, ডেস্ক : রাতের অন্ধকারে কলাপাতায় শুয়ে কথা বলা সাদা দাঁড়িওয়ালা এই ব্যক্তিকে চিনতে পারছেন? নিশ্চয় চিনতে পারেননি? উনি হচ্ছেন আলোচিত সমালোচিত সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দনা এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অপেক্ষা করছিলেন পালানোর জন্য।
গত বৃহস্পতিবার তিনি কানাইঘাট যান এবং শুক্রবার বিকালে যান দনা সীমান্ত এলাকায়।

YouTube player

তাকে ১৫ হাজার টাকায় সীমান্ত পাআর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল স্থানীয় পাতি ছড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে দালাল সাদ্দাম হোসেন। কিন্তু তাকে বেদম মারধর করে সাদ্দাম ও অন্য এক যুবক ৭০ লাখ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। মারধরে অসুস্থ হওয়ার পর তাকে কিছু কলাপাতা বিছিয়ে শুইয়ে রাখা হয়। রাতে স্থানীয় লোকজন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে আটক করে বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড কে খবর দেয়। বিজিবি সদস্যরা এসে তাকে গলায় গামছা পেছিয়ে তাদের হেফাজতে নেয়। এ সময় বিচারপতি মানিকের একটি ভিডিও ধারণ করে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওতে দেখা যায়, সাবেক বিচারপতি মানিকের গলায় গামছা পেছিয়ে হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন একজন বর্ডার গার্ড সদস্য। আরেকজন তার নাম জিজ্ঞেস করছেন। বিচারপতি মানিক তার পুরো নাম বলেন এবং তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ বলে জানায়। তাকে প্রশ্ন করা হয়, দেশ ছেড়ে পালাচ্ছিলেন কেন? জবাবে মানিক বলেন- প্রশাসনের ভয়ে আমি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছি।

এক সময়কার দাপুটে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এক পর্যায়ে অসহায়ভাবে গায়ের শার্ট তুলে বুক দেখিয়ে বলার চেষ্টা করেন তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। বিজিবি সদস্যের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি কোনো জুলুম করিনি। বিচারপতি হিসেবে যা রায়, আমি তাই দিয়েছি।

সাবেক এই বিচারপতি গ্রেপ্তার হওয়ার সময় ব্রিটিশ পাসপোর্ট, বাংলাদেশি পাসপোর্ট, কিছু টাকা, ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে বলে জানায়। পরবর্তীতে বিজিবি’র সীমান্ত ফাঁড়িতে নিয়ে হাতে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২রা আগষ্ট কোটা আন্দোলন ইস্যুতে চ্যানেল আই-তে প্রচারিত ‘টু দ্য পয়েন্ট’ আয়োজিত টকশোতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সাবেক সংসদ সদস্য ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগদান করা গোলাম মওলা রনি এবং সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আলোচনার একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে সঞ্চালক দীপ্তি চৌধুরীর ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং বেশ কয়েকবার উপস্থাপিকার ওপর নিজের ক্ষোভ ঝাড়েন এবং উচ্চবাচ্য করেন। শুধু তা-ই নয়, অনুষ্ঠান শেষে স্টুডিও ছাড়ার আগে উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে আখ্যা দেন বিচারপতি মানিক।পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এই ঘটনায় গত ১২ আগস্ট তাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজের কাছে লিখিতভাবে এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান এই বিতর্কিত সাবেক বিচারপতি।

প্রসঙ্গত, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করায় সাবেক বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে গত ১৯ আগস্ট নোয়াখালীর আদালতে মামলা করা হয়। জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ বাদী হয়ে নোয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন সাবেক বিচারপতি আবুল হোসেন মোহাম্মদ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেছিলেন ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, ছিলেন পাকিস্তানের চর’।
জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ে মিথ্যাচারসহ কালিমা লেপনের হীন উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে মানহানিকর বক্তব্য দেন তিনি। যা প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। তার এমন মন্তব্যে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। গ্রেপ্তারের শঙ্কা থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক আইনের শিক্ষক এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে অবসরে যান।

বিএনএ নিউজ, শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ