বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৫
১৬ জুলাই, ১৯৭১
বাংলাদেশের মত এমন শান্তির দেশ, এমন সুখের দেশ আর কোথায় আছে। এমন জন্মভূমি ক’জনে ভাগ্যে পায়। সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা বঙ্গজননী। বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা চিরকাল ঘরকুনো। বুঝিবা একটু আড্ডাবাজ। কিন্তু বাংলার ছেলেমেয়েরা কোনদিন গোলমালে নিজেদেরকে জড়াতে চায়নি। মায়ের স্নেহ, দাদা-দাদী আর নানা-নানীর আদর কেড়ে বাংলার ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়। অথচ আজ! ভাবলে অবাক লাগে। এই তো সেদিন! ঘুরছি আর ঘুরছি। হঠাৎ গিয়ে হাজির হলাম মুক্তিবাহিনীর শিবিরে। শান্ত নিরীহ বাঙালীর ছেলেরা দীপ্ত অগ্নিশিখার মত জ্বলছে। এক একটি ছেলে যেন জীবন-মৃত্যুকে ভৃত্য করে নিয়েছে। মায়ের আঁচল ছেড়ে, ঘরের নিশ্চিন্ত কোণ ছেড়ে, সামান্য সুখ আর আনন্দের পথ ত্যাগ করে বাংলাদেশের ছেলেরা এই প্রথম অস্ত্রের ভাষায় কথা বলছে। পার্থক্যটা অনুভব না করে উপায় নেই। আমিও না করে পারিনি। বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিন্তু বন্ধ নেই মুক্তিবাহিনীর স্কুল-কলেজ। তা সবসময়ই খোলা।
এমনি একটি মুক্তিবাহিনীর শিবিরে গেলাম সেদিন। সোনার টুকরো হীরের টুকরো সব ছেলেরা লড়াইয়ে যাবে তাই তৈরি হচ্ছে। বললাম, কেমন আছো ভাইরা আমার? কেমন আছো? সবাই বলল ভালো আছি। বলল : আমাদের বিপ্লবী সেলাম নিন। নিলাম। ওদের সঙ্গে কথা বললাম। পেয়ালা পেয়ালা চা খেলাম। একজন বলল, আমরা এখন লড়াই করতে যাচ্ছি। বললাম- সে কি? এক্ষুনি? বলল- হ্যাঁ এক্ষুনি। প্রথমে অবশ্য বুঝতে পারিনি। পরে বুঝেছিলাম। অস্ত্রে ওরা দীক্ষিত হচ্ছে- অস্ত্রে ওরা শাণ দিচ্ছে। ওদের সমস্ত মাংসপেশীগুলো ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে, ওরা পায়ের তালে তালে মার্চ করছে- ওরা তৈরি হচ্ছে, লড়াই করতে যাচ্ছে। বাংলার সন্তান মুক্তিযুদ্ধে লড়ছে। শত্রু নিকেশ করছে। পার্থক্যটা সত্যিই ভুলবার মত নয়। মায়ের আদূরে খোকা নয় আর। ঘাড়ে বন্দুক, বুকে অসীম সাহস, চোখে মুখে উজ্জ্বল বিশ্বাস, পায়ে পায়ে বলীয়ান অশ্বের বেগ। ওদের একজন বলল: দেখবেন লড়াইটা। বলার অপেক্ষা মাত্র। সঙ্গে সঙ্গে ওরা দু’ভাগে ভাগ হয়ে গেল।
একদল মুক্তিবাহিনী আর একদল পাকসেনা। শুরু হল লড়াই। ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী হেরে গেল। আমি হাততালি দিয়ে ওদের অভ্যার্থনা জানালাম। এরপর ওরা গেরিলা যুদ্ধের কলাকৌশল দেখালো। আর একবার হাততালি দিয়ে ওদেরকে অভিনন্দন জানালাম। ওদের অবসর ওরা এমনি করেই কাটায়। আনন্দের মধ্যে শিক্ষা আর শিক্ষার মধ্যে আনন্দ। মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা এভাবে তৈরি হচ্ছে। ইয়াহিয়ার খুনী সেনাবাহিনীর কবর রচিত হবে অচিরে। (অধ্যাপক আব্দুল হাফিজ রচিত)
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৯৪) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৬০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৯
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৮
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৭
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৫০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৯
গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী