বিএনএ, রাউজান (চট্টগ্রাম): প্রচণ্ড গরমে চট্টগ্রামের রাউজানে বেড়েছে তালের শাঁসের চাহিদা। যে যেখানে পাচ্ছেন, খেয়ে স্বস্তি মেটাচ্ছেন। রাউজানের জলিলনগর বাস ষ্টেশন, ফকিরহাট বাজার, গহিরা চৌমুহনী, নোয়াজিশপুর নতুন হাট, হলদিয়া আমির হাট, ডাবুয়া বাইন্যার হাট, কাগতিয়া বাজার, রমজান আলী হাট, নাতোয়ান বাগিচা বাজার, কদলপুর সোমবাইজ্যার হাট, ঈশান ভট্টের হাট, পাহাড়তলী চৌমুহনী, গশ্চি নয়াহাট. লাম্বুর হাট, নোয়াপাড়া পথের হাট, উরকিরচর জিয়া বাজার, আলামিয়ার হাট, মগদাই, রঘুনন্দন চৌধুরী হাট, অলি মিয়ার হাট. নতুন চৌধুরী হাটসহ রাউজানের বিভিন্ন অলিগলিতে মাটিতে বসে কিংবা ভ্যানে করে তালের শাঁস বিক্রি করতে দেখা যায়। গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ফল কিনে খাচ্ছেন। ব্যবসায় লাভ ভালো হওয়ায় খুশি বিক্রেতারাও।
শুক্রবার (২৪ মে) দুপুরে রাউজানের জলিলনগর বাস ষ্টেশনে রিক্সা ভ্যানে করে তাল বিক্রি করছেন শাহেদুল আলম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গাছ থেকে তাল সংগ্রহ করি। এরপর সড়কের পাশে বসে বিক্রি করি। প্রচণ্ড গরমের কারণে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। একেকটি তাল ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করছি।’
তিনি বলেন, ‘সবাই তালের শাঁস পছন্দ করেন। আবার মৌসুমি ফল হিসেবে অনেকে শখের বশেই এটি কিনে খান। দামেও বেশ সস্তা। তাই ছোট বড় সবাই তালের শাঁস কিনতে ভিড় করছেন।’
বাইন্যা পুকুর এলাকায় তালের বিশাল স্তুপ নিয়ে চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি মহাসড়কের পাশে বসে আছেন মো. করিম। তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে তাল গাছের তাল কিনে রাঙ্গামাটি জেলা সদরে বাসের ছাদে করে নিয়ে যায়। রাঙ্গামাটিতে তাল বিক্রেতা-ব্যবসায়ীর কাছে তাল বিক্রি করি। রাঙ্গামাটিতে তালের দাম বেশী। তাল বিক্রেতা-ব্যবসায়ীরা তাল বিক্রি করে ভাল লাভ করেন। আমি ও ব্যবসায়ীদের কাছে তাল বিক্রি করে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করি। গরম যত বাড়ে তালের শাঁসের চাহিদাও বাড়ে। এছাড়াও বাইন্নাপুকুর এলাকায় তাল বিক্রি করছি।
পুষ্টিবিদদের মতে, এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ তাল ক্যানসার প্রতিরোধ করে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে, ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। তালের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোধক। এটি ডায়েটের জন্য বেশ কার্যকর। শুষ্ক ত্বক ও চুল পড়া বন্ধ করে। এ ছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ নিরাময়েও এই ফলের ভূমিকা রয়েছে।
এ বিষয়ে রাউজান উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুম কবির বলেন, নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তালের শাঁস প্রচণ্ড দাবদাহে প্রশান্তি এনে দেয়। তাই ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গাছে ফলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তালের সরবরাহও কমে যাচ্ছে। তালগাছ বজ্রপাতে ক্ষতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহুমুখী উপকারী এই গাছ প্রচুর পরিমাণে লাগানো প্রয়োজন। রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় রেলপথ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি ২০ হাজারের বেশী তাল গাছের বীজ রোপন করেছেন। রোপন করা তাল বীজ থেকে রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় তাল গাছ উঠছে।
এছাড়াও রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় পুকুর-দিঘীর পাড়ে সড়কের পাশে রয়েছে তাল গাছ। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তালগাছের তালের শাঁস বিক্রি করা হয় হাট বাজারে। পাকা তালের রস দিয়ে তাল পিঠাসহ বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরী করেন এলাকার মহিলারা। পাকা তালও বাজারে বিক্রি করা হয়।
বিএনএনিউজ/ শফিউল আলম/ বিএম/এইচমুন্নী