বিএনএ, ঢাকা: পবিত্র শবে বরাতকে আরবিতে লাইলাতুল বরাত বলা হয়, যার বাংলা অর্থ সৌভাগ্যের রজনি। হাদিস অনুসারে, মহান আল্লাহ এ রাতে বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন, জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন।
শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়। হাদিসে ভাষায় এই রাতকে লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনীও বলা হয়ে থাকে।
এ রাত মহিমান্বিত এক রাত। এ রাতে অসংখ্য বান্দা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও কল্যাণ লাভ করেন।
রসুলুল্লাহ ( সা.) বলেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তায়ালা এ রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন। ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন। অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (তাবারানি ১৯৪)
শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলায় নিয়ত করলে এই ভাবে করা যাবে : ‘শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবার।’
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম কানুন:
নিয়ত: নামাজ পড়ার পূর্বে নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করার সময় মনে মনে বলতে হবে, “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য শবে বরাতের ২/৪ রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি।”
ওয়াক্ত: শবে বরাতের রাতের যেকোনো সময়ে নফল নামাজ পড়া যায়। তবে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নামাজ পড়া l
রাকাত: শবে বরাতের নামাজের নির্দিষ্ট কোনো রাকাত নেই। যত ইচ্ছা রাকাত নামাজ পড়া যায়। তবে, সাধারণত ৮, ১২ অথবা ১০০ রাকাত নামাজ পড়া হয়।
নামাজের নিয়ম: অন্য নফল নামাজের নিয়ম অনুযায়ী শবে বরাতের নামাজ পড়া যায়। প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য কোনো সূরা পড়তে হয়।
নামাজের পর: নামাজ শেষে দোয়া-মুনাজাত করা উচিত। এ রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা, মাগফিরাত ও জান্নাতের প্রার্থনা করা উচিত।
শবে বরাতের রাতে করণীয়:
রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো।
নামাজ, দোয়া, তাসবিহ, তিলাওয়াত ইত্যাদি করা।
ক্ষমা প্রার্থনা করা।
গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।
শবে বরাতের রাতে এড়িয়ে চলা উচিত :
পাপাচার ও গুনাহের কাজ করা।
রাত জেগে গান বাজনা শোনা ও অন্য অনৈতিক কাজ করা।
পবিত্র শবে বরাতে রোজা রাখা :
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে শাবানে ১ দিন রোজা রেখেছে, তাকে আমার সাফায়াত হবে। আরো একটি হাদিস শরীফে আছে যে, হুজুর সালল্লাহু তালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শাবানের ১৫ তারিখে রোজা রাখবে, তাকে জাহান্নামের আগুন ছোঁবে না।
পবিত্র শবেবরাতের দোয়া
রমজানের দুই মাস আগ থেকেই রাসুল (স.) একটি দোয়া বেশি বেশি পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই দোয়াটি আমরা পুরো রজব-শাবানে পড়তে পারি। দোয়াটি হলো— اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ (অর্থ) ‘হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রজব মাস শুরু হলে রাসুল (স.) এই দোয়া পাঠ করতেন। (বায়হাকি: ৩৫৩৪; নাসায়ি: ৬৫৯; মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬)।
নিচের দোয়াটাও এ রাতেও পড়া যায়।
للَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى উচ্চারণ: আল্লাহম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি। অর্থাৎ হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা পছন্দ করো, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও। এ ছাড়াও এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, তাসবিহ পাঠ পর দিন রোজা রাখার অনেক অনেক ফজিলত রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে কোরআন-হাদিসের ওপর সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিএনএ,এসজিএন/এইচমুন্নী