ইউক্রেনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: ১৯২২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের চার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের অন্যতম প্রজাতন্ত্র হল ইউক্রেন। ১৯৯১ সালে ইউক্রেন স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১লা ডিসেম্বর এক গণভোটে এটির প্রতি ইউক্রেনের জনগণ সমর্থন দেন। ইউক্রেনের স্বাধীনতা লাভ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।
ইউক্রেন পূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র। রাশিয়ার পরে এটি ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। ইউক্রেনের পশ্চিমে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণ-পশ্চিমে রোমানিয়া ও মলদোভা, দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর ও আজভ সাগর, পূর্বে ও উত্তর-পূর্বে রাশিয়া এবং উত্তরে বেলারুস।মোট সাতটি দেশ আর দুটি সাগরের সঙ্গে সীমানা রয়েছে ইউক্রেনের৷ দেশটির জনসংখ্যা সাড়ে চার কোটির একটু বেশি৷
ইউক্রেনের রাজধানীর নাম কি-কিয়েভ যেটি ইউক্রেনের বৃহত্তম শহর।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ৫ বছর মেয়াদের জন্য জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীর নাম কি -Shmyhal Denys
রাশিয়া হতে স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্র ইউক্রেন এর দুটি প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক। এ দুটি রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত বহুদিন ধরে। রাশিয়া সিমান্তবর্তী এই প্রদেশ রাশিয়ার সমর্থনে পরিচালিত হয়।
ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ
ইউরোপের মোট তেল-গ্যাস সরবরাহের ২৫ শতাংশ যায় জ্বালানি সমৃদ্ধ রাশিয়া থেকে।রাশিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রধান গ্যাস পাইপলাইনগুলো ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে গেছে।
তাই ইউক্রেন যদি রাশিয়ার কব্জার বাইরে চলে যায়, তাহলে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়া তার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। সে কারণে রাশিয়া বহুদিন ধরেই চেষ্টা করছে, ইউক্রেন যাতে কোনোভাবেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ না দেয়।
ইউক্রেন এখনো ন্যাটো জোটের সদস্য নয়। কিন্তু পূর্ব ইউরোপের আরো অনেক সাবেক কমিউনিস্ট দেশের মতো, ইউক্রেনও সেই পথে চলেছে বলে মনে করছে রাশিয়া।
পুতিনের রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ যে কারণে
১৯৯০-এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন কয়েক টুকরো হয়। তারপর থেকে রাশিয়া দেখছে, সামরিক জোট ন্যাটো ধীরে ধীরে তাদের ঘিরে ফেলছে। সংগত কারণেই রাশিয়া তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
১৯৯৯ সালে চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়। ২০০৪ সালে যোগ দেয় বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাতভিয়া, লিথুয়েনিয়া, রোমানিয়া ও স্লোভাকিয়া। ২০০৯ সালে যোগ দেয় আলবেনিয়া।
জর্জিয়া, মলদোভা বা ইউক্রেনেরও ন্যাটোতে যোগ দেওয়া আকাঙ্ক্ষা আছে। কিন্তু রাশিয়ার কারণে এখন পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি।
রাশিয়া- ইউক্রেন: কত সৈন্য
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার সৈন্য সংখ্যা আট লাখ ৫০ হাজার, আর ইউক্রেনের সৈন্য সংখ্যা দুই লাখ। তবে উভয় দেশের রিজার্ভ সৈনিক রয়েছে আরও আড়াই লাখ। রাশিয়ার আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আড়াই লাখ, তবে ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র ৫০ হাজার।
ইউক্রেনের ১০ লাখের বেশি সেনা
রুশ আক্রমণ প্রতিরোধে ইউক্রেন তাদের সংরক্ষিত সেনাদের নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করেছে। ইউক্রেনের ১০ লাখের বেশি সেনা প্রতিরোধযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে। যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনের নাগরিকদেরও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইউক্রেনের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী নাগরিকদের নিয়মিত সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ বিমান
ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান ৬৯টি হলেও রাশিয়ার রয়েছে ৭৭২টি।
রাশিয়ার ট্যাঙ্ক রয়েছে ১২ হাজার ৪২০টি, ইউক্রেনের ২,৫৯৬টি।
রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, কিন্তু ইউক্রেনের এরকম কোন অস্ত্র নেই।
সামরিক অভিযানের ঘোষণা
২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউক্রেনে ৩০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি ওলেক্সি দানিলভ জানান, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক ছাড়া সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি থাকবে।
২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়ে পুতিন পূর্ব ইউক্রেনে থাকা ইউক্রেনের সেনাদের অস্ত্র ত্যাগ করে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
পুতিনের সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। পুতিন বলেন, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। বস্তুত, রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেনই পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। তাদের রক্ষা করতেই রাশিয়াকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।
আরও পড়ুন : ন্যাটো কী
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মাঝেই রাশিয়ায় ইমরান খান
bnanews24,GN