আমিন মুহাম্মদ : ব্যাটেলিয়ান আনসার সদস্যরা নিজ নিজ জেলায় চাকরি করলেও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা নিজ জেলায় চাকুরি করতে পারবেন না কেন? এমন প্রশ্ন তুলেছেন অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে এক স্বারকলিপিতে এমন বৈষম্য দূর করে নিজ জেলায় অঙ্গীভূত আনসারদের চাকরির সুযোগ প্রদানের দাবি জানান।
স্বারকলিপিতে বলা হয়, পুলিশ, ব্যাটেলিয়ান আনসারসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা নিজ নিজ জেলায় চাকরি করছেন। শুধু অঙ্গীভূত আনসারদের বেলায় ব্যতিক্রম। যদিও ঢাকা, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ কিছু এলাকায় এ নিয়ম শিথিল রয়েছে। এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
স্বারকলিপিতে আরো বলা হয়, ২০১৭ সাল থেকে আমরা দৈনিক বেতন পাই ৪৩৫ টাকা। মাসে সর্বমোট বেতন পাই ১৩০৫০ টাকা। কিন্তু একজন দিনমজুরের দৈনিক মজুরি ৫০০-৬০০ টাকা। ফলে এটা আমাদের জীবন যাত্রার জন্য খুবই অপ্রতুল্য। প্রতি ৩ বছর পর পর আমাদের চাকরি প্রত্যাহার হয়ে যায়। এরপর ৬ মাস-১ বছর বসে থাকতে হয়। বর্তমান পদ্ধতির ডিজিটাল এসএমসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যখন চাকরি থাকে না তখন পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। আমাদের বাহিনী সৃষ্টির পর থেকে নিজ নিজ জেলায় পদায়নের ব্যবস্থা ছিল। তখন নিজ জেলায় পদায়নের পর অবশিষ্টদের অন্য জেলায় পোস্টিং দেয়া হত। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে আইনের সংশোধন ব্যতীত আমাদের নিজ জেলায় পোস্টিং বন্ধ আছে। ফলে নিজ জেলার বাইরে গিয়ে চাকরি করলে পরিবার পরিজনের অসুবিধা কিংবা অসুখ বিসুখে সময় দিতে পারেন না। যা নিতান্তই অমানবিক বলে উল্লেখ করা হয়।
১৯৯৫ সালে মহান জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী আইন পাশ হয়। অঙ্গীভূত আনসার বেতন ভাতার সম্পূর্ণ অংশ নিয়োগকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বহন করে। এর জন্য সরকারের কোন বাড়তি খরচ করতে হয় না। অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা দৈনিক ভিত্তিতে বেতন ভোগ করেন বিধায় নিজ নিজ জেলায় শতভাগ নিয়োগের কথা বলা হয়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলায় অনেক কর্মসংস্থান রয়েছে। এ সমস্ত জেলায় মাত্র ৩০ ভাগ স্মার্টকার্ডধারী অঙ্গীভূত আনসার সদস্য রয়েছে। তাদের নিজ নিজ জেলায় নিয়োগ দিলেও অন্য জেলা থেকে আরও ৭০ ভাগ আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রদান করা স্বরকলিপিতে বলা হয়। ২০১২ সাল থেকে এমআইএস সফটওয়্যারে কর্তৃপক্ষ নিজ জেলায় অফার বন্ধ করে দেন।
প্রসঙ্গত : সাধারণ আনসার, এপিসি ও পিসি অঙ্গীভূতকরণ ও অ-অঙ্গীভূতকরণ নীতিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের নিজ জেলায় পদায়ন বন্ধ করা হয়। নীতিমালা ২০১৭ এ বলা হয়েছে, ‘আনসার বাহিনী আইন ১৯৯৫ এর ৩ নং আইন এর ধারা ৬(৪) ও ১২ এবং আনসার বাহিনী প্রবিধান মালা ১৯৯৬ এর প্রবিধি ৫ অনুসারে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক বিভিন্ন জেলার জেলা কমান্ডান্টদের মাধ্যমে সাধারণ আনসার, এপিসি ও পিসি অঙ্গীভূত ও অ-অঙ্গীভূত করতে পারেন। অঙ্গীভূত আনসার, এপিসি ও পিসিদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে কৌশলগত উন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের আবশ্যকতা দেখা দেয়ায় এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হলো’।
এই নীতিমালার ৬(গ) তে বলা হয়েছে, কোন সাধারণ আনসার (পুরুষ) নিজ জেলায় অঙ্গীভূত হতে পারবে না। তবে, নিজ বিভাগ/রেঞ্জকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর জেলায় অঙ্গীভূত হতে পারবে। শুধুমাত্র মহিলা সাধারণ আনসার নিজ জেলায় অঙ্গীভূত হতে পারবে। তবে, চাহিদার ভিত্তিতে তাদের যেকোন জেলাতেও অঙ্গীভূত করা যাবে।
২০০৯ সালের নীতিমালায় নিজ নিজ জেলায় পদায়নের অগ্রাধিকার ছিল। ২০০৯ এর নীতিমালায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী আইন ও বিধি-বিধান ১২-ছ (১) এ বলা হয়েছে, যে সকল জেলায় অধিক সংখ্যক আনসার অঙ্গীভূত রয়েছে। সে সকল জেলার নিজস্ব কোটার অতিরিক্ত আনসার অন্য জেলা হতে অঙ্গীভূত করা হবে।
এ ব্যাপারে অপারেশন অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবে। (২) এ বলা হয়েছে, যে সকল জেলায় অধিক সংখ্যক আনসার অঙ্গীভূতির অবকাশ রয়েছে সেই সকল জেলায় প্রথমে নিজ জেলার আনসারদের নিয়োগের পর নির্ধারিত অন্যান্য জেলা হতে বাছাইকৃত আনসারদের মোতায়েন করা হবে। অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা ২০১৭ সালের নীতিমালা বাতিল করে ২০০৯ এর নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
বিএনএনিউজ/ওয়াইএইচ