বিএনএ, চট্টগ্রাম: ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। চট্টগ্রামের লালদীঘি গণহত্যা দিবস। ১৯৮৮ সালের এ দিনে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করে পুলিশ। আহত হন কমপক্ষে দু’শতাধিক মানুষ।
নিহতরা হলেন- হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও মো. শাহাদাত।
জানা যায়, ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি ঘটনার ৩২ বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র চারদিন আগে হওয়া আদালতের রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তারা হলেন-মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, গোপাল চন্দ্র (জেসি) মণ্ডল ও আব্দুল্লাহ। এরা প্রত্যেকেই পুলিশের সাবেক সদস্য ছিলেন। একই রায়ে আদালত ৩২৬ ধারায় পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডও প্রদান করেন।
তৎকালীন এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকাণ্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মির্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। এতে রকিবুল হুদাকে ‘হত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে ৩২ বছর ধরে বিচারকার্য চলাকালে মারা যান তিনিসহ তিনজন। বাকি দুইজন হলেন- কনস্টেবল বশির উদ্দিন ও আব্দুস সালাম।
আলোচিত এ মামলায় সাক্ষী দেন ৫৩ জন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী মামলায় সাক্ষ্য দেন।
ফিরে দেখা: ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে মুখিয়ে ছিল সারাদেশ। তৎকালীন ১৫ দলীয় জোট নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমণের প্রহর গুণছিল হাজার হাজার ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী জনতা। বেলা দেড়টার দিকে শেখ হাসিনার গাড়ি কোতোয়ালী থানা হয়ে পুরনো বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন অতিক্রম করছিল।
এ সময় স্বৈরশাসকের পেটোয়া বাহিনী মুক্তিকামী জনতার গণজোয়ার দেখে ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাই এ সমাবেশ বানচাল করে দিতে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার রকিবুল হুদার নির্দেশে গর্জে ওঠে পুলিশ বাহিনীর রাইফেল। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে নেত্রীকে বাঁচাতে মানববর্ম রচনা করেন।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিত গুলিতে ঝরে পড়ে কতগুলো তাজা প্রাণ। সেদিনের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং আইনজীবী, চিকিৎসকসহ অন্তত ২৪ জন বেসামরিক লোক শহীদ হন। আহত হন আরও প্রায় তিন শতাধিক। নৃশংসতার একপর্যায়ে পুলিশের কড়া পাহারায় নিহতদের রাতের আঁধারে নগরীর অভয়মিত্র মহাশ্মশানে পুড়িয়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে চলে লাশ গুম করার অপচেষ্টা।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারির সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রধান ফটকে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে নিহত ২৪ জনের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে। এটি ১৯৯২ সালের ২৪ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়।
বিএনএনিউজ,বি এম/এইচমুন্নী