25 C
আবহাওয়া
৯:৫২ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৫, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » জামায়াতের ছোট চালে বিএনপি’র বড় পরাজয়!

জামায়াতের ছোট চালে বিএনপি’র বড় পরাজয়!


বিএনএ ডেস্ক : রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি হচ্ছে দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে মেধাভিত্তিক ক্ষমতা চর্চা। রাজনীতির সঙ্গে দাবা খেলার বেশ মিল রয়েছে। দাবা খেলায় চাল দিতে হয় চিন্তা ভাবনা করে,ধীরে সুস্থে। একটি ভুল চালে পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। রাজনীতিতেও ভুল চাল বা সিদ্ধান্ত নিলে রাজ্য হারাতে হয়। ২০০৭ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান এবং  বিচারপতি এম.এ আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করে ইলেকশন ক্যারিকেচারের মাধ্যমে ফের ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করেছিল বিএনপি।

YouTube player

 

কিন্তু তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার আন্দোলনের সংহিসতার জেরে ২০০৭ সালের ১১ ই জানুয়ারি ক্ষমতাসীন হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাজনীতির ভুল চালে বিএনপি ১৭ বছর ক্ষমতা বলয়ের বাহিরে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে দশম, ২০১৮ সালে একাদশ সর্বশেষ ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ক্ষমতায় টিকে থাকে। যার ফলে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলনকে খুব হালকাভাবে দেখেছিল আওয়ামী লীগ।

কেননা এর আগে ২০২৩ সালে বিএনপি- জামায়াতের আন্দোলনকে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে দমন করতে সমর্থ হয়। তারও আগে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত ইসলামীর ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচী বানচাল করতে সমর্থ হয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেকারণে বেশ আত্নবিশ্বাসী ও অহংকারী হয়ে ওঠেছিল দলটির প্রধান শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতারা। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল চাল দিয়ে গত ৫ই আগষ্ট আওয়ামী লীগ রাজ্য হারায়। কোন রকমে ভারত পাড়ি দিয়ে জীবন রক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি গত ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেছিলেন ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না’। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, শেখ হাসিনার আমলে অনুষ্ঠিত তিন নির্বাচনে গণতন্ত্র চর্চার যে ‘বন্ধ্যাত্ব’ দেখা গিয়েছিল তা কেটে যাবে। কিন্তু নির্বাচনের দিনক্ষণ বলেননি প্রধান উপদেষ্টা।

নির্বাচনের ট্রেন সংস্কারের জটে আটকে গেছে। নতুন নির্বাচনের আকাশে কালো মেঘ ঘন হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব বাড়ছে ক্রমশ। সঙ্গে বাড়ছে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস। দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নানা ক্ষেত্রে রীতিমতো নাকানিচুবানি খাচ্ছে। কোথাও শান্তি নেই, নেই স্বস্তি। সবকিছু মিলে এক ধরনের অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে। কী হতে যাচ্ছে-সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

এ অনিশ্চয়তার মধ্যেই গত ১৬  ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান নির্বাচনের সম্ভাব্য একটি সময়সীমা ঘোষণা করলেন। আগামী দেড় বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে একটি নতুন নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। পর দিন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের ব্যাখ্যায় তাঁর প্রেস সচিব বলেন, ২০২৬-এর ৩০ জুনের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।

প্রশ্ন হলো-নির্বাচন আয়োজনে এত সময় লাগবে কেন? নাকি পর্দার আড়ালে অন্য কোনো খেলা শুরু হয়েছে? প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে।

অন্যদিকে সরকার ও শিক্ষার্থীদের সমর্থনপুষ্ট ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও ইনকিলাব মঞ্চ বলেছে, শেখ হাসিনার বিচার শেষ হওয়ার আগে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। গণ অধিকার পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক নুরু আরেক কাঠি সরেস। তিনি বলেছে, দুই বছরের আগে নির্বাচন নয়- তার দাবি জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে উপদেষ্টাদের কারও কারও নেতিবাচক মন্তব্য এখন বেড়েই চলেছে। ফলে প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষিত সময়ে নির্বাচন হবে, নাকি এ নিয়ে নতুন করে শুরু হবে সংঘাত?

১৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘রোডম্যাপ ঘোষণার কথা বললেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ভাব ফুটে ওঠে, সেটি গণ অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী।’

উপদেষ্টাদের অনেকে নির্বাচন চান না, তাঁরা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চান-রাজনীতির মাঠে এমন গুঞ্জন বাড়ছে। বাংলাদেশে কি তাহলে আরেকটি এক-এগারো আসছে?  আরেকটি এক-এগারোর মঞ্চ প্রস্তুত হচ্ছে। গণতন্ত্রের স্বপ্ন গ্রাস করছে, নতুন এক-এগারোর ষড়যন্ত্র। এবার কী ভিতরে ভিতরে দুই পরিবারকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা চলছে? কেউ কেউ বলছে, আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, বিএনপিকেও মাঠ ছাড়া করতে চায় এক এগারোর সুশীলরা।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে এক অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সেনাসমর্থিত এক-এগারো সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে ওই সরকারের প্রধান কাজ ছিল দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর এক-এগারো সরকার, সুশীলদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়। মাইনাস টু ফর্মুলার মাধ্যমে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে। ‘কিংস পার্টি’ গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে; যার ফলে সাধারণ মানুষ সে সময় এক-এগারো সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। তাদের ‘মাইনাস ফর্মুলা’ শেষ পর্যন্ত জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। পরাজিত সুশীলরা কী, ১৭ বছর পর একই  নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছেন?

জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য অনেক কমিটি গঠন করেছে। সংস্কারের আড়ালে ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদে আঁকড়ে রাখার কোনো পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের কারও কারও রয়েছে, এমন প্রশ্নও উঠেছে।

জুলাই- আগষ্ট আন্দোলন পরবর্তীতে দেশে দুইটি রাজনৈতিক ধারা বিদ্যমান। একটির নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি, অন্যটি জামায়াত ইসলামী। বিএনপি দ্রততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করলেও, জামায়াত ইসলামী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘ যৌক্তিক সময়’ দিতে চায়। এই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নিজেদের রূপান্তর করতে চায় শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে। জামায়াতের রাজনীতি এই কথিত ‘যৌক্তিক সময়ের’ শব্দে। নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে ‘সংস্কারের’ উপর ভর করে বিএনপির উদ্দেশ্যে একের পর এক চাল দিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যতই দিন যাচ্ছে বিএনপি  ক্ষমতা বলয় থেকে ততই দুরে চলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের ছোট চালে বড় পরাজয়ের শঙ্কায় রয়েছে বিএনপি।

 

সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ