30 C
আবহাওয়া
৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ - মে ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সাকার কবরে ‘শহীদ’ লেখা পুষ্পস্তবক!

সাকার কবরে ‘শহীদ’ লেখা পুষ্পস্তবক!

সাকা

বিএনএ, চট্টগ্রাম : রাজনীতিতে বির্তকিত ও রসাত্মক তীর্ষক মন্তব্যের জন্য বিখ্যাত ছিলেন বিএনপির সংসদ সদস্য এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী।

১৯৭৯ সাল থেকে ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের রাউজান রাঙ্গুনিয়ায় ছিলেন একক অধিপতি। তার গ্রামের বাড়ি গহিরা ও চট্টগ্রামের গুডস হিলের বাসায় শতশত নেতাকর্মীর ভিড় লেগে থাকতো। সালাউদ্দন কাদের চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পরও তার কিছু অনুসারি ও স্বজনদের দেখা গেছে তার শহর ও গ্রামের বাড়িতে। ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে তার ফাঁসি হয়। কিছু আত্মীয়-স্বজন এসে গ্রামে জানাযা পড়ে লাশ কবরস্থ করেন। এরপর কেটে গেছে ৮ বছর। এখন তার শহর ও গ্রামের বাড়িতে মানুষের ভিড় হয় না। এমনকি মৃত্যুবার্ষিকীতে স্বরণ সভা, মিলাদ মাফহিল দুরে থাক দল থেকে আয়োজন করা হয় না শোকসভা, পত্রিকা অফিসে পাঠানো হয় না কোন শোকবার্তা।

গত ২২ নভেম্বর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরে কিউসি গ্রুপ ও নরসিংদী জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্ম আসলাম ছাড়া কেউ শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করেনি। দেখা যায়নি দল কিংবা আত্ত্বীয় স্বজনরা কেউ তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা কিংবা জেয়ারত করতে। কোথায় গেল সালাউদ্দিন চৌধুরীর হাজার হাজার অনুসারি ও আত্মীয় স্বজনরা? এমন প্রশ্ন এলাকার মানুষের।

যে দুটি পুষ্পস্তবক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবরে দেয়া হয় তাতে ‘শহীদ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ২২ নভেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে শহীদ উল্লেখ করে একটি পলিবোর্ড টাঙ্গানো হয়। সেটি স্থানীয় ছাত্রলীগ ভাঙ্গচুর করে উপড়ে ফেলে। প্রশ্ন ওঠেছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আদৌ শহীদ কিনা? গোয়েবলসিয় কায়দায় তাকে কি শহীদ বানানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ইতিহাসের আলোচিত-সমালোচিত হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খেয়াল করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা প্রচারণায় এগিয়ে ছিল। জার্মানরা প্রচারণায় মার খেয়েছে বারবার। শুধু প্রচারণা দিয়েই ব্রিটিশরা আড়াল করেছিল অনেক কিছু। জার্মানরা মার খায় ব্রিটিশ প্রচারণার কাছে। ব্রিটিশ মিডিয়া গুজব ছড়িয়ে জার্মানদের বিভ্রান্ত করে। ব্রিটিশ গুজব ও প্রচারণার কাছে জার্মানরা নাস্তানাবুদ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার তার ভাবনায় পরিবর্তন আনেন। মিথ্যাচার করতে একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম ‘মিনিস্ট্রি অব পাবলিক এনলাইটেনমেন্ট অ্যান্ড প্রোপাগান্ডা’। এই মন্ত্রণালয়ের প্রধান করা হয় তার প্রিয়ভাজন গোয়েবলসকে। গোয়েবলস বলতেন একটি মিথ্যাকে তিনবার বললে তা সত্যে পরিণত হয়।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রাজনীতির হাতেখড়ি মুসলিম লীগের মাধ্যমে। তাঁর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পীকারও হয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ফজলুল কাদের চৌধুরী এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যা সহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়। ফজলুল কাদের চৌধুরী দালাল আইনে কারাগারে বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছিলেন পলাতক।

১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে মুসলিম লীগ থেকেই প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সামরিক শাসক এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে নিজেই দল গঠন করেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। পরে নিজের দল বিলুপ্ত করে ৯৬ সালে যোগ দেন বিএনপিতে। ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকেটে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বাকপটু স্বভাব ও নানা ধরনের বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবসময়ই আলোচিত-বিতর্কিত এক চরিত্র সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া এবং দলের নেতাদের নিয়ে নানা মন্তব্য করেও বারবার আলোচনার শিরোনাম হয়েছেন তিনি। ঝড় তুলেছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে।

২০০১ সালে দলীয় প্রধানকে নিয়ে এক কটূক্তির জের ধরে বহিষ্কৃত হয়ে ওই বছরই আবার দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিনি নিযুক্ত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পর দলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে তার মন্তব্য আলোচনার ঝড় তুলেছিল, এমনকি ঢাকার গুলশানে দলীয় চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের সামনে তার বিরুদ্ধে মিছিলও করেছিল দলেরই একদল নেতাকর্মী।

২০১০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সালাউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হন। ২০১৩ সালের পহেলা অক্টোবর চার অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ২০১৫ সালের ২২শে নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে দেশের আলোচিত- সমালোচিত বির্তকিত রাজনীতিবিদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জীবন প্রদীপ নিবে যায়। সেই সঙ্গে পতন হয় তার ৪৪ বছরের রাজনৈতিক উপাখ্যান।

বিএনএ/ শাম্মী, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ