বিশ্ব ডেস্ক: দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা দুই বছরের বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেল। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টায় দেশটির নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, বামপন্থী নেতা অনুরা কুমার দিসানায়েক শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ঐতিহাসিক দ্বিতীয় দফার ভোট গণনায় তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে দিসানায়েক প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হন।
শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের পর এটাই প্রথম নির্বাচন। দিসানায়েক দেশটির বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি)-এর নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেন এবং প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয় অর্জন করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা ২৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে মাত্র ১৬ শতাংশ ভোট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
প্রাথমিক জীবন ও রাজনীতিতে প্রবেশ
দিসানায়েকের জন্ম অনুরাধাপুরা জেলার থাম্বুতেগামা গ্রামের এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে। তার বাবা ছিলেন দিনমজুর এবং মা গৃহিণী। শৈশব থেকে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং ১৯৮৭-৮৯ সালের জেভিপির সশস্ত্র আন্দোলনে যুক্ত হন।
মূলধারার রাজনীতিতে অভিষেক
১৯৯৫ সালে দিসানায়েক জেভিপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে যোগ দেন এবং ২০০০ সালে জাতীয়তাবাদী তালিকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। শ্রীলঙ্কার বামপন্থী রাজনীতিতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করার পাশাপাশি, তিনি এলটিটিইর (তামিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী) বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করেন।
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ ও সংবিধানের প্রতিশ্রুতি
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সমর্থন নিশ্চিত করতে দিসানায়েক সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদের প্রতি তার সমর্থনের কথা জানান, যা বৌদ্ধ ধর্মকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়। তিনি বলেন, এই অনুচ্ছেদে কোনো পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা তার দল প্রতিরোধ করবে।
তামিল সংখ্যালঘুদের প্রতি অবস্থান ও ভারতবিরোধী মনোভাব
দিসানায়েকের দল জেভিপি তামিলদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরোধিতা করেন এবং ১৯৮৭ সালের ভারত-শ্রীলঙ্কা চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে। তার দল তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার সামরিক অভিযানে সক্রিয়ভাবে সমর্থন জানায়। এছাড়া, তিনি ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কাচাথিভু দ্বীপকে ভারতকে ফেরত দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) নিয়ে মতবিরোধ
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট দিসানায়েক জানিয়েছেন, তার সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেইলআউট চুক্তির শর্ত পুনরায় আলোচনা করবে, যা বর্তমান সরকারের নীতির বিপরীত। তিনি শ্রীলঙ্কার জন্য একটি নতুন সূচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং দেশকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করবেন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ