বিএনএ, চট্টগ্রাম : ৮ মাস ধরে অর্ধেক বেতনও পাচ্ছেন না চট্টগ্রামে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের (বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহ) মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত করোনা যোদ্ধারা। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মহামারিতে আইসোলেশন, আইসিইউ ও সিসিইউসহ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ করেছে। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনার ভয়ে আত্মীয়-স্বজনরা পর্যন্ত রোগীর পাশে থাকতে চায়নি। সেখানে সার্বক্ষণিক রোগীর পাশে থাকছেন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মচারী। রোগীর মলমূত্র পরিস্কার করা, রোগীকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া, রোগীর বিছানা পরিস্কার ও হাসপাতাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। করোনা মহামারিতে হাসপাপাতালে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সসহ প্রায় সবাই পাচ্ছেন প্রনোদনা।
সেই প্রনোদনা দূরে থাক, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিমাসে বেতনের অর্ধেক টাকা দিয়ে থাকেন, সেই অর্ধেক টাকাও গত ৮ মাস ধরে তারা পাচ্ছেন না। চলতি বছর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ৪ মাসের বেতন তুলেছে। কিন্তু কর্মচারিদের জানুয়ারিতে এক মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে রোগীদের দেওয়া বকশিশে চলছে তাদের সংসার। এতে আর্থিক অভাব-অনটনে হতাশায় দিন কাটছে তাদের। তারা বলছেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জনপ্রতি প্রায় ১৫ হাজার টাকা বেতন তুলেন। তাদের দেওয়া হয় ৭ হাজার টাকা। সেই ৭ হাজার টাকাও আমারা ৮ মাস ধরে পাচ্ছি না। তাহলে আমাদের সংসার চলে কিভাবে ?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত এক কর্মচারি জানান, বেতন এসেছে, ব্যাংক থেকে এসএমএস আসছে। কিন্তু আমরা ব্যাংক থেকে বেতন তুলতে পারছি না। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আমাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছে। আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে চেক বই তাদের কাছে রেখেছে। তারা ব্যাংক থেকে আমাদের বেতনের টাকা তুলে ৭ হাজার টাকা দেন। সেখানে প্রতিবাদের কোনো সুযোগ নেই। প্রতিবাদ করলেই ছাঁটাই করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগের আগে কারও কাছ থেকে ১ লাখ, কারও কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার আবার কারও কাছ থেকে নিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জেনারেল হাসপাতালে ৩৬ জন আউটসোর্সিং কর্মচারি রয়েছেন। গত তিন বছর ধরে টানা আউটসোর্সিংয়ে এসব কর্মচারি সরবরাহ করছে ‘অভি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালের সঙ্গে প্রতিজন কর্মচারির মাসিক বেতন ১৪ হাজার ৯৫০ টাকায় চুক্তি রয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসব কর্মচারিদের মাসিক বেতন দেন ৭ হাজার টাকা। প্রতি ১ বছর পরপর টেন্ডারের মাধ্যমে আউটসোর্সিং ( বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরবরাহ) প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ‘অভি এন্টারপ্রাইজ’র মামলার কারণে সেই টেন্ডার এখন আর হয় না। এই সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে টানা লোকবল সরবরাহ করছে ‘অভি এন্টারপ্রাইজ’।
বিষয়টি জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালের হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা মো. ফোরকান জানান, হাসপাতালের কাছে গত অর্থ বছরের বিল পাবেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের ৪ মাসের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সব মিলে ১৬ মাসের বিল পাবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তিনি বিল পাচ্ছেন না, তাই বেতন দিচ্ছেন না। ১৪ হাজার ৯৫০ টাকা বেতনের মধ্যে কর্মচারিদের দেওয়া হচ্ছে ৭ হাজার টাকা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয় আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না। কারণ এটা প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করবে না। চাকরির বাজার খুব খারাপ। বিনা বেতনে চাকরি করার মানুষ রয়েছে। সেখানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ৭ হাজার টাকা দিচ্ছেন তাতে কম কি?
এই বিষয়ে জানতে আউটসোর্সিং’র ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘অভি এন্টারপ্রাইজ’র মালিক সত্যজিৎ অভি ওরফে বাবু বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে আজ সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ পর্যন্ত কোনো বিল পায়নি। তাহলে কিভাবে তাদের বেতন দেবো। বেতনের অর্ধেক টাকা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যের পরিচালক, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে তাদের বেতনের বিল পাস হয়। এসব জায়গায় টেবিল টু টেবিল পারসেন্টিজ দিতে হয়। ফলে তাদের বেতন পুরোটা দেওয়া সম্ভব হয় না। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার পাওনা পরিশোধ না করে তারা আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাই আমি মামলা করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, একেবারেই ৮ মাস ধরে বেতন দেওয়া হচ্ছে না তা ঠিক নয়, তাদের কিছু কিছু বেতন দেওয়া হচ্ছে। রোজার ঈদেও তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে। মূলত সমস্যাটা হয়েছে মামলার কারণে। মামলাটা প্রত্যাহার হলে বেতনও পরিশোধ করা যেতো এবং নতুন করে টেন্ডারও আহবান করা হতো। মামলার নিষেধাজ্ঞায় সব আটকে আছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘অভি এন্টারপ্রাইজ’র বিরুদ্ধে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৩ জন আউটসোর্সিং কর্মীর ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছিল।
বিএনএনিউজ২৪.কম/আমিন