22 C
আবহাওয়া
১২:২২ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ফেনীর ৩ লাখ মানুষ ভয়াবহ বন্যায় পানি বন্দী

ফেনীর ৩ লাখ মানুষ ভয়াবহ বন্যায় পানি বন্দী

ফেনীর ৩ লাখ মানুষ ভয়াবহ বন্যায় পানী বন্দী

ফেনী(বৃহস্পতিবার): স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনী। বৃহস্পতিবার(২২ আগস্ট) এ জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে। পাহাড়ি ঢলে পানির স্রোত আরও তীব্রতর হয়েছে।  পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া এলাকায় পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিনদিন যাবত কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বিস্তীর্ণ জনপদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

নতুন করে সদর উপজেলার কাজীরবাগ, ধর্মপুর, মোটবী, ছনুয়া, ধলিয়া, ফাজিলপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি, উপকূলীয় এলাকায় পানি বৃদ্ধি, দাগনভূঞা উপজেলার সিন্ধুরপুর, জায়লস্কর, পূর্বচন্দ্রপুরসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল রযেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ দুই-তৃতীয়াংশ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফেনীর ৩ লাখ মানুষ বন্যার কবলে রয়েছেন।

ফেনীর নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকায় ১৯৮৮ সালের পর বন্যা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়নি আগে কখনো।

ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, “খোয়াই, ধলাই, মুহুরী, হালদা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকতে পারে”।

এদিকে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার  জানান, পরশুরাম ফুলগাজীসহ বন্যা দুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। সেনা ও কোস্টগার্ড আধুনিক বোট নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্যা দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট, ২০২৪ )বিকেলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়,বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক বোট, খাবার নিয়ে ফেনীতে প্রবেশ করেছে। স্বেচ্ছাসেবকরা  জানান, খবর পেলেই উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে।

বন্যা কবলিত এলাকায় খাবার ও পানির প্রচণ্ড সংকট তৈরি হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর লালপোলে বন্যার পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কে বন্যার কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

 

ফেনীর বন্যার আপডেট

ফেনী শহরের শহরের বেশিরভাগ আবাসিক এলাকায় ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। সড়কে কোথাও কোথাও বুকসমান পানি জমেছে।

অতি বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গত দেড় মাসে তৃতীয় দফায় ফেনীতে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত জুলাই মাসের শুরুতে এবং গত ২ আগস্ট পরশুরাম ও ফুলগাজীর একাধিক লোকালয় বন্যার কবলে পড়ে।

জানা গেছে, বন্যার পানিতে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত থেকেই জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে এ তিন উপজেলাসহ সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ পুরোপুরি সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। একইসঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে ফেনী শহরে জলাবদ্ধতার কারণে দুপুর থেকে রাত অবধি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

পরশুরাম ও ফুলগাজী এবং ছাগলনাইয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল সংযোগ বন্ধ। টেলিযোগাযোগ বন্ধ

প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। এসব এলাকার বাজারের পাশে উঁচু ঘর ছাড়া প্রায় সবই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। একতলা ভবনের ছাদও ডুবে গেছে পানিতে।

ফেনী থেকে ফুলগাজী উপজেলায় প্রবেশের কোন সুযোগ নেই সাধারণ মানুষের। ফুলগাজীর প্রবেশমুখ বন্ধুয়া থেকে প্রধান সড়কে কোমর পানি থাকায় ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। ফুলগাজী উপজেলার পরই পরশুরাম উপজেলা। তার পাশেই ছাগলনাইয়া উপজেলা। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা পুরোই বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে আছে। তিনটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ পুরোপুরি পানিবন্দি।

এই তিন উপজেলায় বুধবার(২১ আগস্ট) ভোর থেকেই নেই বিদ্যুৎ। কে কোথায় কিভাবে আছে তা জানারও সুযোগ নেই। শহরের কিছু এলাকা ছাড়া পুরো জেলা জুড়ে গতকাল থেকে নেই বিদ্যুৎ।

স্থানীয়রা জানান,

ধারণার চেয়ে ভয়াবহ ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি, যোগাযোগবিচ্ছিন্নতা স্বজনদের মাঝে বাড়াচ্ছে আতঙ্ক

অনেকের মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। সেই সঙ্গে বেশ কিছু মোবাইল টাওয়ার বিকল্প উপায়ে চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ায় নেটওয়ার্কেও সমস্যা হচ্ছে।

জেলায় বসবাস করা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে দেশের বাইরে ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত মানুষ উদ্বিগ্ন। তারা দ্রুত মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল করার অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে কোনোভাবে মোবাইলে চার্জ থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে খবর নিতে পারেন, তাদের উদ্ধারে সম্ভাব্য সহযোগিতা করতে পারেন।

ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামের পাশাপাশি আজ সকাল থেকে সদর উপজেলাতেও বন্যার পানি ঢুকে গেছে। ‘জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছি। যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিচতলাগুলোতে পানি উঠে গেছে, উপরের তলাগুলোতে উদ্ধারকৃতদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে।’ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খিচুড়ি রান্না করে বিতরণ করা হচ্ছে।

বিএনএ, এসজিএন/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ