31 C
আবহাওয়া
৯:৪৩ অপরাহ্ণ - মে ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮০ (ঢাকা-৭)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮০ (ঢাকা-৭)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-৭ আসনের হালচাল।

ঢাকা- ৭ আসন

ঢাকা-৭ সংসদীয় আসনটি ঢাকা ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ২৩,২৪,২৫,২৬,২৭, ২৮,২৯,৩০,৩১,৩২,৩৩,৩৫, ও ৩৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। যার পূর্বে- গেন্ডারিয়া, পশ্চিমে- সিদ্দিক বাজার, উত্তরে- ফুলবাড়িয়া ও দক্ষিণে- নাজিরাবাজার। এটি জাতীয় সংসদের ১৮০ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৬ শত ৫৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ১ শত ৯০ জন। নির্বাচনে বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৬ শত ১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৯ হাজার ৩ শত ৬২ ভোট।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সাদেক হোসেন খোকাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ১৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭ শত ৬০ জন। নির্বাচনে বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৭ হাজার ২ শত ৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ফজলুল করিম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ৯ শত ৪০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭ শত ৫৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৭ হাজার ২ শত ৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৩ হাজার ৬ শত ৮৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ সাঈদ । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৮ হাজার ২ শত ২৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোস্তাফা জালাল মহিইদ্দিন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ১ শত ৩৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৩ শত ২৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোস্তাফা জালাল মহিইদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩ শত ৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো: নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ৮ শত ৪৭ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ সেলিম বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১ হাজার ৪ শত ৫৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৭৭ হাজার ৮ শত ৩৮ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ সেলিম বিজয়ী হন। হাতি প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৭ শত ২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোস্তফা জালাল মহিইদ্দিন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৭ শত ৩৩ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের হাজী মোহাম্মদ সেলিম বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৮ হাজার ১ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪ শত ২৯ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১১ জন। নৌকা প্রতীকে হাজী মোহাম্মদ সেলিম, ধানের শীষ প্রতীকে গণফোরাম এর মোস্তফা মোহসীন মন্টু , লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির তারেক আহমেদ আদেল , হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের আবদুর রহমান, টেলিভিশন প্রতীকে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ এর জাহাঙ্গীর হোসেন, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগ এর আফতাব হোসেন মোল্লা, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টির মাসুদ পাশা, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্ট মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, বটগাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলন এর মোঃ হাবিবুল্লাহ্, মই প্রতীকে সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর খালেকুজ্জামান, গোলাফ ফুল প্রতীকে বিপ্লব চন্দ্র বনিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাজী মোহাম্মদ সেলিম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬ শত ৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গণফোরাম এর মোস্তফা মোহসীন মন্টু। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫১ হাজার ৬ শত ৭২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ,সপ্তম,অষ্টম, সংসদে বিএনপি দশম সংসদে স্বতন্ত্র , নবম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-৭ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-৭ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.১১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৫১%, বিএনপি ৫৬.৬৬%, জাতীয় পাটি ১.৪৭% জামায়াত ইসলামী ১.৬৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৬৯%ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.৫৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.৮৪%, বিএনপি ৪৫.০৩% জাতীয় পাটি ৬.৮৬%,জামায়াত ইসলামী ১.৮০% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৪৭%ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.২৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.২৩%, ৪ দলীয় জোট ৫৪.৪৪%, জাতিয় পার্টি ১.৩৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৭% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৭২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৪.১৭%, ৪ দলীয় জোট ৩১.০১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৮২% ভোট পায়।

ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার কারনে এবার তিনি মনোনয়ন না চাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তার ছেলে ইরফান সেলিম মনোনয়ন চাইবেন। তবে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরসহ নানা কারণে তিনি বির্তকিত। সে কারণে এই আসনে পিতা-পুত্রের মনোনয়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

এই অবস্থায় মনোনয়নে তালিকার শীর্ষে আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। সেবার নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও এ আসনটি জোটসঙ্গীদের ছেড়ে দিতে পারে দলটি।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ দেখা যায়, ঢাকা-৭ আসনটি লালবাগ নামে পরিচিত। এই আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। এটি কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি শাসন করে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা বেশ শক্তিশালী। কিন্তু দলটির তিনটি আলাদা গ্রুপ রয়েছে- হাজী সেলিম গ্রুপ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন গ্রুপ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির গ্রুপ। বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী নয়। তবে গ্রুপিং নেই। সেই দিক থেকে নির্ভার রয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের কোন্দলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসনটি পুণরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৮০তম সংসদীয় আসন (ঢাকা-৭) আসনটিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৭৯ (ঢাকা-৬)

বিএনএ/ শাম্মী, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ