রায়হান সিকদার,লোহাগাড়া(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় বড়হাতিয়া ইউনিয়নের কুমিরাঘোনা জঙ্গলী পীর পাড়া এলাকায় পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে ভাবির ছুরিকাঘাতে দেবর খুন হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহতের নাম ইউনুচ(৪০)। সে ওই এলাকার আলী আহমদের পুত্র। ২৩ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
বিষয়টি বড়হাতিয়া ইউপির চেয়ারম্যান এমডি জুনাইদ চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার পর পরই ঘাতক ভাবী নাছিমা আকতার(২৩) ও তার স্বামী ইউসুফকে গ্রেফতার করেছে লোহাগাড়া থানা পুলিশ।
স্হানীয় ও পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়হাতিয়া জঙ্গলী পীর পাড়ার মোঃ ইউসুফ(৪৫) এর সংসারে ২ স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী শহরে বাসায় থাকেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রী নাছিমা আকতার(২৪) বড়হাতিয়ায় নিজ গ্রামে স্বামীর বাড়ীতে বসবাস করত। বিগত ৩ বছর পুর্বে ইউসুফ দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নাছিমা কে বিবাহ করে। পারিবারিক কলহের জের ধরে ঘটনার দিন বুধবার দুপুরে নাছিমা আকতার ও তার দেবর ইউনুছের সাথে ঝগড়াঝাঁটি সৃষ্টি হয়। ইউনুছ তিন সন্তানের জনক।দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থাকতো। পরে নাছিমা আকতার তার স্বামীকে বিষয়টি অবহিত করলে ইউসুফ তার ছোট ভাই ইউনুছকে বিবাদী করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বিষয়টি তদন্ত করতে চুনতি পুলিশ ফাঁড়িকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চুনতি পুলিশের ফাঁড়ির এসআই শিশির বিন্দু ধরের নেতৃত্বে একটি টিম বিষয়টি তদন্ত করতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় নাছিমা ও তার দেবরের সাথে হাতাহাতির এক পর্যায়ে ভাবী তার দেবর ইউনুচকে ছুরিকাঘাত করে। স্হানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের ছোট ভাই মুহাম্মদ হেলাল জানান, আমার বড় ভাই ইউনুচ আমার সাথে দোকান পরিচালনা করত।কোনদিন কোন খারাপ কাজ করতে দেখিনি। আমার ভাবীর কথা শুনে পারিবারিক কলহ( ঝগড়াঝাঁটি) বিষয় নিয়ে বড় ভাই ইউসুফ আমার ছোট ভাই ইউনুচকে বিবাদী করে থানায় অভিযোগ করেছে বলে বিষয়টি জানতে পারি।
নিহতের স্ত্রী রেহেনা আকতার জানান, আমার স্বামী নির্দোষ। ইউসুফের স্ত্রী নাছিমার বাড়ীতে প্রতিদিন বাজার নিয়ে বহিরাগত লোকজন আসতো। আমার স্বামী এগুলো দেখতে পেলে তাতে বাধা দেওয়ার কারণে ভাবী নাছিমা আমার স্বামীকে নির্মমভাবর ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে । তিনি সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচারের জোর দাবী জানান।
উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের ডাঃ আবদুল্লাহ আল রেজোয়ান জানান, পারিবারিক কলহের ঘটনায় ইউনুছকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে আনার পূর্বে মারা গেছেন।
স্হানীয় ইউপি সদস্য মুুহাম্মদ রফিক উদ্দিন জানান, ইউসুফের স্ত্রী নাছিমাকে তার ছোট ভাই ইউনুছ গতকাল রাতে মারধর করেছিল। মারধরের ঘটনাটি ইউসুফ আমাকে জানালে চেয়ারম্যানসহ বসে বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
চুনতি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ(ইন্সপেক্টর) মুুহাম্মদ রাফিকুল ইসলাম জামান জানান, ইউসুফের ২ স্ত্রী রয়েছে। তার প্রথম স্ত্রী শহরে থাকে। দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রামের বাড়ীতে থাকে। ইউসুফ তার ছোট ভাইকে বিবাদী করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এসআই শিশির বিন্দু ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) জাকের হোসাইন মাহমুদ জানান, এ ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থল হতে ঘাতক ভাবী নাছিমা ও তার স্বামী ইউসুফকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে । এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি জানান।
বিএনএনিউজ২৪, এসজিএন