বিএনএ ডেস্ক, ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হতে না হতেই রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েকটি তেল রপ্তানিকারক দেশ ছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মূল্যমান ব্যাপকভাবে কমেছে। সাম্প্রতিককালে ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার মান কম হ্রাস পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে এশিয়াসহ গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং সব উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে আছে। একই সময়ে কয়েকটি তেল রপ্তানিকারী দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান বেড়েছে। এ তথ্য নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছেন।
তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি পরিচালিত গবেষণা থেকে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছেন দলটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। শনিবার (২১ মে) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে দলের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সভায় তিনি এ গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখানো হয়, কোভিড পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েকটি তেল রপ্তানিকারী দেশ ছাড়া পৃথিবীর সব দেশেই ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মূল্যমান ব্যাপকভাবে কমেছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের মুদ্রারও মূল্যমান কিছুটা কমেছে। কিন্তু, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশি মুদ্রার মূল্যমান হ্রাসের পরিমাণ খুবই কম। নিজস্ব মুদ্রার মূল্যমান কম হ্রাস পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে গোটা বিশ্বে কম্বোডিয়া প্রথম আর বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে।
গবেষণায় দেখানো হয়, বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান কমেছে ৩.৪১%, ভারতীয় রুপির কমেছে ৬.৮৩%, পাকিস্তানি রুপির ৩০.৬৩%, নেপালি রুপির ৬.৪৮%, মিয়ানমারের কিয়াটের ১২.৬৭%, চীনা ইউয়ানের ৫.৪%, থাই বাথের ৯.৬৬%, জাপানি ইয়েনের ১৭.৩২%, দক্ষিণ কোরীয় ওনের ১২.০৭%, মালয়েশিয়ান রিঙ্গিতের ৩.৯%, ফিলিপিনো পেসোর ৯%, তাইওয়ান ডলারের ৬.৪%, সিঙ্গাপুর ডলারের ৩.৭৫%, কম্বোডিয়ান রিয়েলের ০%, ব্রুনাই ডলারের ৩.৬০%, লাও কিপ এর (লাওস) ৪১%, টার্কিশ লিরার ৮৯.৩৭%, মিসরীয় পাউন্ডের ১৪.৫%, দক্ষিণ আফ্রিকান রেন্ডের ১৩.৬৬%, অস্ট্রেলিয়ান ডলারের ৯.১৭%, নিউজিল্যান্ড ডলারের ১০.৭৭%, ব্রিটিশ পাউন্ডের ১১.৮৬%, ইউরোর ১৩.৪০%, সুইস ফ্রাঙ্কের ৮.৫৫%, সুইডিশ ক্রোনারের ১৯.৬৭%, নরওয়েজিয়ান ক্রোনের ১৬.৫৪%, ডেনিশ ক্রোনের ১৫.৩৯%, পোলিশ মুদ্রার ১৮.৭৪%, কানাডিয়ান ডলারের ৬.৩২%, আর্জেন্টাইন পেসোর ১১.৫%, চিলিয়ান পেসোর ১৫.৪৪% মূল্যমান কমেছে।
ব্রাজিল এবং কয়েকটি তেল রপ্তানিকারী দেশ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব কারেন্সির বিপরীতে টাকার মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের মধ্যে জাপানি ইয়েনের বিপরীতে বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩.৮৬%, ইউরোর বিপরীতে ১০.৯৪%, ভারতীয় রুপির বিপরীতে ২.৭৩ %, ব্রিটিশ পাউন্ডের বিপরীতে ৮.০৭%, অস্ট্রেলিয়ান ডলারের বিপরীতে ৬۔৪৫%, চীনা ইউয়ানের বিপরীতে ১.৩২%, কানাডিয়ান ডলারের বিপরীতে ২.৯৪%, দক্ষিণ কোরীয় ওনের বিপরীতে ৯.৩৮%, ডেনিশ ক্রোনের বিপরীতে ১১.৯৭%, আর্জেন্টাইন পেসোর বিপরীতে ২১.৬৯%, সুইস ফ্রাঙ্কের বিপরীতে ৪.৯২% এবং নিউজিল্যান্ড ডলারের বিপরীতে ৭۔৪৭%।
ডলারের বিপরীতে মূল্যমান বেড়েছে মাত্র দুটি দেশের মুদ্রার। ডলারের বিপরীতে রাশিয়ান রুবলের মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯.০৫% এবং ব্রাজিলিয়ান রিয়েলের মূল্যমান বৃদ্ধি পেয়েছে ৮.৯৭% ।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব একটা গভীর অর্থনৈতিক সংকট ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে বিএনপি এবং তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে নানা গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে দেশের বড় ক্ষতি করতে চায়। তারা দেশবিরোধী অপশক্তি। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের তথা আমাদের জাতীয় স্বার্থে এদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের এই আকাশচুম্বী সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশবিরোধী শক্তি এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। এরা বাংলাদেশের ধ্বংস চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্যরা জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করবে এবং এই অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রতিটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থেকে এই অশুভ শক্তির নানা মিথ্যাচার ও অপপ্রচার প্রতিহত করবে।’
‘জঘন্য মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার’
সভায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে নানা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তথ্য উপস্থাপন করেন তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেল এই স্যাটেলাইটের সেবা গ্রহণ করার ফলে রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট ব্যবহার না করলে এই অর্থ বিদেশি কোনো কোম্পানিকে দিতে হতো। তাই, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোনো মুনাফা অর্জন করছে না, এটি একটি জঘন্য মিথ্যাচার এবং অপপ্রচার।’
বাংলাদেশকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না
তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ‘কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, ভৌত কাঠামো খাতসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে অসীম দক্ষতার পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। যতই ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার হোক না কেন বাংলাদেশকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার নিজস্ব মহিমায় এগিয়ে যাবে।’
‘বাংলাদেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য এবং তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না। এটিই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা।’
দেশবিরোধী শক্তি বাংলাদেশের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত
জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং উপ-কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশ আজ প্রকৃত অর্থে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের আর পেছনে ফেরার কোনো কারণ নেই। দেশবিরোধী শক্তি বাংলাদেশের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাই এই সাফল্যের একমাত্র দাবিদার।’
সভায় তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য ডা. জাহানারা আরজু, এম এনামুল হক আবীর, আমেনা কোহিনুর, আবুল ফজল রাজু, সৈয়দ আবু তোহা, ব্যারিস্টার সৌমিত্র সর্দার, অ্যাডভোকেট জামাল মিয়া, ড. শবনম জাহান, রায়হান কবীর, মেজর (অব.) এম এ সায়ীদ খান, রাশিদুল বাসার ডলার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ,জিএন