বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।
আজ প্রকাশিত হলো
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৬
৪৬তম পর্ব
বিশ্বব্যাঙ্ক প্রতিনিধি মি: টাইগারম্যান বলেন: বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আমি দেখলাম এয়ারপোর্ট রোডের দু’পাশে বহু ট্রেঞ্চ খোঁড়া হয়েছে এবং রাস্তার দুধারের বাড়িগুলি জনশূন্য। আর এইসব জনশূন্য বাড়িগুলির ছাদে, বারান্দায় ও জানালায় বালির বস্তা দিয়ে বাঙ্কার বানানো হয়েছে। রাস্তায় দু’হাত ছাড়া চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এইসব চেকপোস্টে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা পাহারা দিচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে কথিত যে দু-একটা অসামরিক গাড়ী চলাচল করছে সৈন্যরা সেগুলো তন্নতন্ন করে তল্লাশী করছে। পথচারীদেরও তল্লাশী করা হচ্ছে। পথচারীদের বেশভূষা ও চেহারায় বাঙালীত্বের স্পষ্ট ছাপ পাওয়া গেলে সৈন্যরা তাদের ধরে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে যাচ্ছে। বাঙালী বুদ্ধিজীবী তরুণ হলে তো আর কথায় নেই। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় যুদ্ধক্ষেত্র সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। সারি সারি বাঙ্কার ও ট্রেঞ্চে সশস্ত্র পাকিস্তানী সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। জায়গায় জায়গায় রাস্তার দু’পাশে দেয়াল তুলে দিয়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
শহরের প্রধান প্রধান সরকারী ভবনগুলোর চারপাশে ১৫ থেকে ২৫ ফুট উঁচু দেয়াল তোলা হয়েছে। ঢাকা রেডিওকে বর্তমানে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর ঢাকার রাস্তায় কেউ হাঁটে না। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত শহরের রাস্তায় কেবল পাকিস্তানী সৈন্য, পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ও কুকুর ছাড়া আর কেউ চলাচল করে না। মানুষ সেখানে পাকিস্তানী সৈন্যদের অত্যাচারে এতই ভীতসন্ত্রস্ত যে কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না। বিদেশীদের সঙ্গে কথা বলতে তারা ভীষণ ভয় পায়। কারণ আজও প্রতিদিন শহরে ধরপাকড় চলছে। কখন কোন মুহূর্তে সেখানে কার জীবনে মৃত্যূ নেমে আসবে তা কেউ জানে না। প্রায় প্রতিরাতেই বোমা বিস্ফোরণ ও খণ্ড লড়াইয়ের শব্দ শোনা যায়। গোটা শহরটা এখন বদ্ধভূমিতে পরিণত।
বিশ্বব্যাঙ্ক প্রতিনিধি বলেন: এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সেখানে থেকে কাজ করা আমার পক্ষে যুক্তিগতভাবে, নীতিগতভাবে কিংবা নৈতিকতার দিক থেকে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, পাকিস্তানে আমি আর কোনদিন ফিরে যাবো না। বাংলাদেশ থেকে হানাদার পাকিস্তানীরা বিতাড়িত হলে আমি বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতে যাবো। আমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে কাজ করবো। দীর্ঘ ছ’বছর থাকার পর আমি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে ভালবেসেছি। তাদের সঙ্গে আমার হৃদয়ের বন্ধন অনেক গভীর।
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ৮০-৮১) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৪০
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৯
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৮
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৭
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৬
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৫
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৪
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৩০
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা