Iবিএনএ,চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আগামী বুধবার (২৬ মে) নাগাদ উড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে বর্তমানে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে এ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
রোববার (২৩ মে) বিকেলে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ বাংলাদেশে ২৫ বা ২৬ তারিখে আঘাত হানতে পারে। এজন্য ১ নম্বর দূরবর্তী বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। জেলার আওতাধীন প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। চলছে সচেতনতামূলক মাইকিং।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি
উপকূলবর্তী সকল উপজেলার ইউএনও, এসিল্যান্ড, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি), পিআইও ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিগণকে কর্মস্থলে থাকার জন্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অপরিষ্কার ও জরাজীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে বিদ্যুৎ সংযোগ ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো প্রস্তুত করার জন্যে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় চট্টগ্রামে জেলা ও উপজেলায় প্রস্তুত করা হয়েছে ৫০০টি আশ্রয়কেন্দ্র। ৫ জন এডিসি উপকূলবর্তী উপজেলাগুলোর আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছেন।
যে কোন সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও আশ্রয়কেন্দ্রে আনয়ন, সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও সমূহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। গুখাদ্য কেনার জন্যে প্রতিটি উপজেলায় ১ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রচার প্রচারণাসহ মাইকিং করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ও সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আজ রোববার (২৩ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
তিনি বলেন, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এদিকে আজ চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় (বিকেল ৩ পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ০.১ মিলিমিটার।
উল্লেখ, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এখন পর্যন্ত সুপার সাইক্লোনের সম্ভাবনা নেই। তীব্র থেকে তীব্রতর ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে খুলনা, সুন্দরবন এলাকা। ইয়াস এটি একটি পার্সিয়ান শব্দ, যার ইংরেজি হচ্ছে জেসমিন। বাংলায় যাকে বলা হয় জুঁই ফুল। এই নামটি দিয়েছে ওমান।
বিএনএনিউজ/মনির
Total Viewed and Shared : 135