বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে জাফর আলী চৌধুরী (৪৩) নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মরদেহের হাতে নখের আঁচড়, কানে জমাটবাঁধা রক্ত এবং মাথার পেছনে ফোলা জখম ছিল।
জাফর আলীর পরিবারের দাবি—পারিবারিক কলহের জের ধরে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। পুলিশকে খবর দেওয়ার আগেই লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রোমানা ইসলামকে একমাত্র আসামি করে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে নগরের চান্দগাঁও থানায় নিহত জাফর আলী চৌধুরীর ছোট ভাই মো. আবুল হাসনাত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে, গতকাল রাতে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের একটি ভবনের ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত জাফর আলী চৌধুরী ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানার উত্তর ইদিলপুর এলাকার জানে আলম চৌধুরীর ছেলে। তিনি আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক কদমতলী শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী ও মামলার আসামি রোমানা ইসলাম নগরের কোতোয়ালী থানার জেলরোড এলাকার মো. ফয়জুল ইসলামের কন্যা।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, জাফর আলী চৌধুরী তার স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তানকে নিয়ে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন। সংসারের বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে রোমানা ইসলাম জাফরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। জাফরের শ্বশুরও তাকে বিভিন্নসময়ে চাকরিচ্যুত ও ‘নিশ্চিহ্ন’ করার হুমকি দেয়। জাফর তার ছোট ভাইকে বেঁচে থাকতে জানিয়েছিলেন, শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পর তাকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, জাফরের দুই শ্যালক শরীফুল ইসলাম এবং আরিফুল ইসলাম বিভিন্নসময় তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। গত ২২ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রোমানা ইসলাম তার ননাস রোকেয়াকে ফোন করে বলেন, জাফর অসুস্থ এবং তার কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলে। শরীফুলের বড় বোন এবং ভাগিনা চট্টগ্রাম মেডিকেল গিয়ে তার নিথর দেহ দেখতে পায়। এরইমধ্যে শরীফুলের শ্বশুরবাড়ির লোকজন পালিয়ে যান সেখান থেকে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট থেকে ৬টা ৫৫ মিনিট সময়ের মধ্যকার সময়ে জাফরকে তার স্ত্রী রোমানা ইসলাম নিজ হাতে কিংবা অন্য কারও সাহায্যে হত্যা করেছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করেন বাদী আবুল হাসনাত।
আবুল হাসনাত বলেন, ‘আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত দুই বছর আগেও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়ার পর ডিভোর্স দেওয়ার কথাও হয়েছিল। আমার ভাইকে বিভিন্নভাবে ওরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। হত্যা না করলে পুলিশকে ফোন না করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আমার ভাইয়ের লাশ ফেলে পালালো কেন তারা? আমি এর সুষ্ঠ তদন্ত এবং বিচার চাই।’
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল রাতে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রীকে একমাত্র আসামি করে নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় স্ত্রী রোমানা ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নিহতের শরীরে আঘাতের তেমন কোনো চিহ্ন নেই। তবে তার কান দিয়ে হাল্কা রক্ত এসেছিল, মাথার পেছনে ফোলা জখম ছিল এবং শরীরে আঁচড়ের দাগ ছিল। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলের লাশঘরে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’
বিএনএনিউজ/ নাবিদ