29 C
আবহাওয়া
৬:০৭ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » চট্টগ্রামে ৫৫ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা

চট্টগ্রামে ৫৫ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা

চট্টগ্রামে ৫৫ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা

বিএনএ,চট্টগ্রাম: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ৫৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

চট্টগ্রামে ৫৫ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি বারবার বলছি মিটিংয়ে, আর যাচাইবাছাই করিয়েন না। এখন ৫০ বছর পরে কারও মনে থাকার কথা নয়। এখন সার্টিফিকেট রাস্তায় বিক্রি হয়। এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভাতাও বাড়িয়ে দিয়ে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার করে দিয়েছেন। তাই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে সবাই।

তিনি বলেন, আমাকে সার্টিফিকেট যাচাইবাছাই করার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগে দিয়েছে। কিন্তু আমি তো চিনতে পারছি না, আমরা তো কাগজপত্র দেখতে হয় এবং কাগজপত্র দেখলে মনে হয় ফ্রেশ একটা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে আসছে। এতো ফ্রেশ তো হওয়ার কথা নয়।

মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি আমার সার্টিফিকেটটা আয়না দিয়ে বাঁধিয়েছি। আমি যখন মুক্তিযো্দ্ধা যাচাইবাছাই করছি তখন টেবিলের সামনে আমার সার্টিফিকেট রেখেছি এবং বলেছি তোমার সার্টিফিকেটের সাথে আমার সার্টিফিকেট মেলাও। আমার সার্টিফিকেট পুরোনো, ওদের সার্টিফিকেট দেখলাম ফ্রেশ। তাহলে বলেন, আমি কীভাবে করি। তখন আমি একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ি।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন যৌবন উৎসগ করছিলেন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। তাদের এখন চাওয়ার কিছু নেই। আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। এখনও আমরা যারা বেঁচে আছি, না থাকলে এইসব সংরক্ষণ হবে না। আমি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাবো যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সকল স্থাপন সংরক্ষণ করা হোক।

যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, মিরসরাইয়ের শুভপুরব্রীজটি ছিল তৎকালীন ঢাকা ও চট্টগ্রামের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সে সময় চট্টগ্রামে প্রবেশের জন্য এটি ছাড়া বিকল্প আর কোনো ব্রীজ ছিল না । আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, শুভপুরব্রীজটি যদি কোনো উপায়ে ধ্বংস করা যায় তাহলে পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রামে প্রবেশ করতে পারবে না। আমরা চট্টগ্রামকে স্বাধীন রেখেই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবো।

চট্টগ্রামে ৫৫ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা

‘আজ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটির জন্য তারা প্রশংসার দাবিদার। ধারাবাহিকভাবে তারা সকল স্থাপনা সংরক্ষণ করবে বলে জেনেছি। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমি আজকে অনুরোধ করবো মোশাররফ ভাও, মনসুর ভাইসহ এখানে যে মুক্তিযোদ্ধারা এসেছেন তাদেরকে। সেই মুক্তিযুদ্ধকালীন, মুক্তিযুদ্ধপূর্ব যে সমস্ত ঘটনা তা একদিন ইতিহাসের উপাদান হবে । এগুলো অন্ততপক্ষে হয়তো লেখার সময় আপনাদের নেই, আপনারা যদি মুখে বলে যান আর অন্য কেউ যদি লিপিবদ্ধ করে রাখে এই জাতি উপকৃত হবে। কারণ আপনাদের অনেক ঘটনা, অনেক ইতিহাস জানা আছে।

তিনি বলেন, আজকে এম এ মান্নান ভাই নেই। অথচ তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাস। এস এম ইউসুফ নেই ওরা ছিল জীবন্ত ইতিহাস। আবু সালেহ, এম এ আজিজ, জহুর আহমেদ চৌধুরী ওনাদেরকে আজকে সংবর্ধিত করছে। এম এ আজিজকে স্মরণ করছি যিনি প্রথমে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ছয়দফা নয় এক দফা। একদফা মানে স্বাধীনতা। তারপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো আমরা এম এ আজিজ দিবস পালন করেছি। আজকে যারা সংবর্ধনা নিচ্ছেন তারা হয়তো আগামী বছর থাকবেন না। এসমস্ত নেতাদের কীর্তি ধরে রাখার জন্য জেলাপরিষদ চেয়ারম্যান এবং আমিও একটা কথা দিয়ে দিতে পারি, এই চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক স্থানসমূহের স্মৃতি ধরে রাখতে কাজ করব।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, এ বছরে তিনটা সূবর্ণজয়ন্তী আছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী, তার আগে ৭ই মার্চের সূবর্ণ জয়ন্তী গেছে আবার ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সূবর্ণ জয়ন্তী। অনেক যুবক ভাইয়েরা হয়তো জানেন না, তিনটা সূবর্ণ জয়ন্তী চলছে।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সচিব মো. রবিউল হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দুই সংবর্ধিত অতিথি চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ ৫৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সন্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) শাব্বির ইকবাল। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, সাবেক গণপরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা আবু মনসুর, যুদ্ধকালীন বিএলএফ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. মঈনুদ্দিন, যদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস।

এসময় সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, মুক্তিযোদ্ধা মীর্জা আবু মনসুর, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, আ ম ম দিলশাদ, জাফর আহমেদ, শওকত, আব্দুল আহাদ, ইউনুচ, দেবব্রত দাস, অ্যাডভোকেট উম্মে হাবিবা, দিলোয়ারা ইউসুফ, শাহেদা আকতার জাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ