বিএনএ, কক্সবাজার : কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৪০০ রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বিকালে কক্সবাজারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব মো. মহসীন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব মো. মহসীন আরো জানান, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। আরো মৃত্যুর খবর রয়েছে। তবে নিশ্চিত না হওয়ায় তা হিসাব করা হচ্ছে না। মৃতদের মধ্যে ক্যাম্প ৮ এর ই-তে একজন, একই ক্যাম্পের ডাব্লিউ ব্লকে পাঁচজন এবং ক্যাম্প ৯ এ পাঁচজন মারা গেছেন। এ সময় নানাভাবে আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৫শ’জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৪০০ রোহিঙ্গা। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বসতবাড়ি। এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় অর্ধলাখ রোহিঙ্গা। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাসপাতাল, বিতরণ কেন্দ্র, শিখন কেন্দ্র, মহিলা বান্ধব পরিষেবাসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলিও।
তিনি বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের একজনকেও যেন না খেয়ে থাকতে না হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
মহসীন বলেন, ঘটনার তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত সহ সকল বিষয়ে অনুসন্ধান করতে কাজ করবে এই তদন্ত কমিটি। তিন দিনের মধ্যে এই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত প্রতিমুহূর্তে খোঁজ খবর নিয়েছেন। সেই সঙ্গে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পসহ পুরো ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ নিযুক্ত করা হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজোয়ান হায়াত জানান, অগ্নিকান্ডে রোহিঙ্গাদের ৪টি ক্যাম্পে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে ৯ হাজার ৩ শ’ বসত ঘর। পুড়ে গেছে বিদেশী সংস্থা পরিচালিত ৩টি হাসপাতাল ও পুলিশের একটি ব্যারাক।
তিনি জানান, আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৬ ঘন্টার চেষ্টায় রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে গেছে নয় হাজারের বেশি ঘর। ঘরহারা হাজারো রোহিঙ্গা বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন নিকটবর্তী রোহিঙ্গা শিবিরে। সেখানে দেখা দিয়েছে খাবার ও পানির সংকট। তবে প্রশাসন ও বিদেশী সংস্থার পক্ষ থেকে তাদেরকে শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
সকালে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, রোহিঙ্গা ক্যাস্পে অগ্নিকান্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে শরনার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সকাল পৌনে ১০ টার দিকে অগ্নিকান্ডস্থল পরিদর্শন করেন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান।
এসময় ডিআইজি জানান, আগুনের উৎস সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। তিনি জানান ধ্বংসস্তুপ থেকে সকালে ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুই শিশু ও এক নারী রয়েছে।
ডিআইজি জানান, আগুনে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও কোন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কক্সবাজারস্থ অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু-দৌজা নয়ন জানান, সোমবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় উখিয়ার বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। পরে আগুন ক্যাম্পটির লাগোয়া ৮-এইচ, ৯ ও ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।