বিএনএ ডেস্ক:টাকার অভাবে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রক্রিয়া থমকে আছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করতে জাতিসংঘ থেকে টাকা দাবি করেছে । শুধু খরচের বিষয়ে সমাধানে না পৌঁছানোর কারণে প্রস্তাবটি আটকে আছে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৯ সালে দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা লাভ করে। রফিক ও সালাম নামে দুই প্রবাসীর চেষ্টায় প্রস্তাবটি জাতিসংঘ হয়ে ইউনেস্কোয় আসে। পরে সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠানোর কথা এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেন। সব মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ বিকাশে দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পায়।
বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার বিষয় কেন আটকে আছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, টাকার জন্য আটকে আছে। আমরা টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারিনি। অনেক টাকা! প্রাথমিক আলোচনায় প্রতিবছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার (৫ হাজার কোটি টাকা) দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
তিনি জানান, ভাষাভাষীর দিক থেকে বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। প্রায় ৮৭ কোটি লোক এ ভাষায় কথা বলে। বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো আপত্তি নেই।
ড. মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘ গঠনের শুরুতে পাঁচটি ভাষা ছিল। পরে জাতিসংঘের দাপ্তরিক কাজে যুক্ত হয় আরবি। এরপর প্রায় ১৯ বছর আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো এর খরচ বহন করছে। জাতিসংঘ সব সময় খরচ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকে। জাতিসংঘ আমাদের বলেছে, তোমাদের বাংলা চালু করলে তো খরচ হবে, খরচটা কে দেবে? তোমরা যদি দাও, তাহলে তোমরা সদস্যরাষ্ট্রকে বলো, তাহলে অসুবিধা নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, জাপানি, হিন্দি ও জার্মান ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল। আর্থিক কারণে ওই তিন ভাষাও জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক ভাষা হতে পারেনি।
তিনি বলেন, শান্তি বজায় রাখার সংস্কৃতি বাংলাদেশ বিশ্বাস করে। রোহিঙ্গা ইস্যু ও অপরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে আমরা বিশ্বাসী। আমাদের এখানকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি শান্তি প্রতিষ্ঠার সংস্কৃতিকে বিশ্বাস করে। সারা বিশ্বের মানুষকে এই যাত্রায় শামিল হতে আমরা আহ্বান জানাই।
এ সময় ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের শাসনের সময় বাঙালি ভাষা নিয়ে অনেক বেশি ভোগান্তি পার করেছে। মানুষের প্রত্যাশাকে দমিয়ে রাখা যায় না। মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পরে যা স্বাধীনতার স্বপ্নকে ত্বরান্বিত করে। ৯৯ শতাংশ মানুষ এই অনুভূতির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছিল বলেই এটা সম্ভব হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের যেমন প্রতিফলন দেখা গেছে, তেমনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমরা তার পরিপূর্ণতা দেখি।
ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কনিষ্ঠ কূটনীতিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিদেশি কূটনীতিকেরা।