বিশ্ব ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে ১,০০০ উত্তর কোরীয় সেনা নিহত হয়েছেন। এমনটাই দাবি করেছেন পশ্চিমা কর্মকর্তারা।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে। রাশিয়ার সামরিক শক্তি বাড়াতে পিয়ংইয়ং হাজার হাজার সেনা মস্কোয় পাঠিয়েছে। এমনকি কুরস্ক সীমান্তেও উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। সেখানেই এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমা কর্মকর্তারা।
বিবিসিকে দেয়া তথ্যে পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলেন, মাত্র তিন মাসে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলে লড়াই করতে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার ৪০ শতাংশ সেনা হতাহত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা আরও জানান, উত্তর কোরিয়া থেকে আনুমানিক ১১ হাজার সেনা রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ইতোমধ্যেই ৪ হাজার সেনা নিহত, আহত, নিখোঁজ বা শত্রুপক্ষের হাতে বন্দি হয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলেন, এই ৪ হাজার সেনার মধ্যে প্রায় ১ হাজার জন চলতি জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আহতদের কোথায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং কখন বা কতসংখ্যক সেনা প্রতিস্থাপন করা হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সেনাকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই মোতায়েন রয়েছে কুরস্ক সীমান্তে।
গত বছরের ১৯ জুন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পিয়ংইয়ংয়ে একটি “সম্পূর্ণ কৌশলগত অংশীদারিত্ব” চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, যা দুই দেশের সম্পর্ককে মিত্রতার পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ এবং জটিল। উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক এবং কৌশলগত সহযোগিতা বিভিন্ন পর্যায়ে অব্যাহত রয়েছে। শীতল যুদ্ধের সময় থেকেই এই সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপিত হয়, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন দিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সম্পর্কের মাত্রা কিছুটা কমে গেলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি আবার ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
রাজনৈতিক সম্পর্ক
রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া উভয়েই তাদের নিজ নিজ স্বার্থে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিভিন্ন সময়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। যদিও রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির বিরোধিতা করে, তারা কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের পক্ষে কথা বলে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা
উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক সীমিত হলেও কিছু নির্দিষ্ট খাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে তেল ও জ্বালানি সরবরাহ করে এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ দেয়। উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার শ্রমিক রাশিয়ায় কাজ করে, যা তাদের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার উৎস হিসেবে কাজ করে।
সামরিক সম্পর্ক
উত্তর কোরিয়া এবং রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে দৃঢ়। সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তর কোরিয়াকে কোরিয়ান যুদ্ধের সময় সরাসরি সমর্থন দিয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কৌশলগত আলোচনা এবং সামরিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা জোরদার করেছে।
কূটনৈতিক সম্পর্কের পুনর্গঠন
২০২০ এর দশকের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের রাশিয়া সফর দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয়। ২০১৯ সালে কিম জং উন এবং ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক এই দুই দেশের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতাকে আরও দৃঢ় করে। বৈঠকে বাণিজ্য, পরিবহন, এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি ও প্রভাব
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠতা আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপ মোকাবিলায় উভয় দেশই একে অপরের সহযোগিতা চায়। বিশেষত, রাশিয়া চীন এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রভাব ভারসাম্য করার চেষ্টা করে।
বর্তমান পরিস্থিতি
ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ায় উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে। কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রাশিয়া সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি পেতে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে, যা তাদের নিজ নিজ স্বার্থে সহায়ক হতে পারে।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
উভয় দেশের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হতে পারে, তবে এটি নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অগ্রাধিকারগুলোর ওপর। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে, রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া একে অপরকে সমর্থন দিয়ে চলেছে, তবে তাদের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা সম্পর্ককে কতটা কার্যকর করে তুলতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়। সূত্র; Yonhap
বিএনএ,এসজিএন,শাম্মী